আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ‘টাই’ ম্যাচের অভিজ্ঞতা হলো বাংলাদেশের, কিন্তু ইতিহাস গড়া ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর সুপার ওভারে জিতে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের ম্যাচটি ক্রিকেটপ্রেমীদের উপহার দিয়েছে এক অবিশ্বাস্য নাটকীয়তা, যেখানে শেষ বল পর্যন্ত উত্তেজনা টিকে ছিল অটুট।
শেষ বলে দুই রান নেওয়ার পর ম্যাচ টাই করেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটার খ্যারি পিয়ের ও শেই হোপ। কিপার নুরুল হাসান সোহানের হাত ফসকে পড়ে যাওয়া ক্যাচেই হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের জয়। সাইফ হাসান তখন মাটিতে নুইয়ে পড়েন হতাশায়।
তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। ম্যাচ টাই হয়ে গড়ায় সুপার ওভারে, যেখানে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরে যায় এক রানে। সাইফ হাসানের জন্য যেন রাতটা রোমাঞ্চ আর হতাশার মিশ্রণই হয়ে রইল।
মূল ম্যাচে দুই দলের স্কোরই থামে সমান ২১৩ রানে। সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১০ রান, জবাবে বাংলাদেশ থামে ৯ রানে। এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাই ম্যাচ ও প্রথম সুপার ওভার অভিজ্ঞতা।
মুস্তাফিজুর রহমানের করা সুপার ওভারে প্রথম বলে সিঙ্গল নেন শেই হোপ। এরপর রাদারফোর্ড আউট হন দ্বিতীয় বলে। তবে শেষ পর্যন্ত হোপের অভিজ্ঞতায় ও বাউন্ডারিতে ভর করে ১০ রান পায় ক্যারিবিয়ানরা।
বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। প্রথম বলেই ওয়াইড ও নো-বল মিলিয়ে রান আসে চার। এরপর ছয় বলে ছয় রান দরকার থাকলেও উইকেট হারানো ও রান তোলার চাপে বাংলাদেশ আটকে যায় ৯ রানে।
এদিকে দিনের শুরুতে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুটা ছিল মন্থর। ওপেনার সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে রান আসছিল ধীরে। সৌম্য সরকার এক প্রান্ত আগলে রাখলেও স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ৫০। ৮৯ বলে ৪৫ রান করে তিনি ফিরেন।
দলের রানের চাকা ঘোরাতে পারেননি শান্ত (১৫), হৃদয় (১২) ও মাহিদুল অঙ্কন (১৭)।
শেষদিকে নুরুল হাসান সোহান ২৪ বলে ২৩ রান করেন, কিন্তু ইনিংসকে ভরসা দেন রিশাদ হোসেন। শেষ দুই ওভারে ৩৪ রান তোলেন তিনি একাই, ১৪ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন ৩টি ছক্কা ও ৩টি চারে। এটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে ২০ বা তদূর্ধ্ব ইনিংসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট (২৭৮.৫৭)।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৩২ রান করে। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২১৩ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে কৃপণ ছিলেন স্পিনার আলিক আথানেজ, যিনি ১০ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট, বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো স্পিনারের অন্যতম সেরা ইকোনমি এটি।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই নাসুম আহমেদের বলে ব্র্যান্ডন কিং ফেরেন শূন্য রানে। এরপর আথানেজ ও কেসি কার্টি মিলে গড়েন ৫১ রানের জুটি। কিন্তু রিশাদ বল হাতে নিয়েই ভাঙেন জুটি।
রিশাদের লেগ স্পিনে বিপর্যস্ত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তিনি নেন ৩ উইকেট। তানভির ইসলাম ও নাসুম আহমেদ নেন ২টি করে উইকেট।
১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে হার নিশ্চিত মনে হচ্ছিল ক্যারিবিয়ানদের জন্য। কিন্তু তখনই দৃঢ়তা দেখান অধিনায়ক শেই হোপ (অপরাজিত ৫৩) ও জাস্টিন গ্রেভস (২৬)। মিরাজের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট না হলে হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতে পারত।
শেষ ওভারে ৫ রান দরকার থাকলেও সাইফ হাসানের নিখুঁত বোলিংয়ে ম্যাচ টাই হয় তবে শেষ বলে সোহানের ফসকানো ক্যাচের কারণে হারায় জয়ের সম্ভাবনা।
এই ম্যাচে জিতে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার একই ভেন্যুতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ২১৩/৭ (৫০ ওভারে)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১৩/৯ (৫০ ওভারে)
ফল: ম্যাচ টাই, সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়।
সিরিজ: ১–১ সমতা।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শেই হোপ।