সর্বশেষ

আইন হাতে তুলে নিচ্ছে মানুষ: উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে গণপিটুনি

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩০
আইন হাতে তুলে নিচ্ছে মানুষ: উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে গণপিটুনি

দেশে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। কখনো অপরাধী মনে করে, কখনো প্রতিহিংসার কারণে কিংবা মবের উন্মাদনায় মানুষকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে (২০২১-২০২৫) গণপিটুনির ঘটনা প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিহতের সংখ্যা মাসিক গড়ে ৫.৬৭ গুণ এবং আহতের সংখ্যা বেড়েছে ৩৩ গুণের বেশি।

 

২০২১ সালে দেশে ৪৪টি গণপিটুনির ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩টি ঘটনায় ৬১ জন নিহত ও ৭৬ জন আহত। ২০২৩ সালে ১৪৫টি ঘটনায় ৮৬ জন নিহত ও ৫৮ জন আহত হন। ২০২৪ সালে ১৬৯টি ঘটনায় ১৪৬ জন নিহত ও ১২৬ জন আহত হন। আর চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই রেকর্ড ৩৫৬টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৯০ জন।

  

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটলেও ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৬টিতে। নিহতের মাসিক গড় সংখ্যা গত বছরের ১২.১৭ থেকে বেড়ে এ বছর হয়েছে ১৩.৭ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে—২০২৪ সালে ৪৪ জন এবং ২০২৫ সালে ৪৭ জন।  

 

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, গণপিটুনির এই প্রবণতা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিফলন। মানুষ যখন রাজনীতি, সরকার ও আইনের প্রতি আস্থা হারায়, তখন সমাজে এ ধরনের সহিংসতা বাড়ে। বিচারহীনতার পরিবেশ জনমানসে হতাশা তৈরি করে, যা ক্রমে সমষ্টিগত সহিংসতায় রূপ নেয়।  

 

তিনি আরও বলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে কারও মৃত্যু হলে সেটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য হয়, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তবুও এমন ঘটনা ঘটছে কারণ অপরাধীরা বিশ্বাস করে তাদের কিছু হবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদন্ত হয় না, সাক্ষী পাওয়া যায় না, আর অপরাধীরা এর সুযোগ নেয়।  

 

ড. ফারুকের মতে, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে প্রমাণ সহজ হবে এবং সাজা দেওয়া সম্ভব হবে। সর্বোপরি জনআস্থা পুনর্গঠনে জোর দিতে হবে।

সব খবর