চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা এখন সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের কারণে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪ মাসে উপজেলায় ১৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে ১১টি রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। অধিকাংশ হত্যাই প্রকাশ্যে গুলি করে সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ ঘটনায় এখনও আসামিরা ধরা পড়েনি।
উপজেলায় সক্রিয় রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী, যারা পাড়া-মহল্লা ও ইউনিয়নজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে। দলীয় পদ-পদবি না থাকলেও তারা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির দুই নেতার অনুসারীরা-গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খন্দকার-এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ ৭ অক্টোবর দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নে গুলিতে নিহত হন বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম। তিনি গিয়াস কাদেরের অনুসারী ছিলেন। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর নোয়াপাড়ায় বিএনপি নেতা আজিজুল হককে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে রাউজানে ৬৫টি সংঘর্ষ এবং ১৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে বিএনপি ও যুবদলের ছয়জন, আওয়ামী লীগের চারজন এবং একজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে, যেখানে ফজল হক, জসিম, কামাল, জানে আলম বাহিনীসহ একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। পাশের ইউনিয়ন ও পৌরসভাতেও রয়েছে রমজান, মামুন, ভূপেশ বাহিনীসহ আরও অনেক গ্রুপ।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিনই সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
বিএনপির নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ইউসুফ তালুকদার বলেন, “আমরা ১৭ বছর নির্যাতিত ছিলাম, এখনো নিরাপদ নই।” গোলাম আকবর জানান, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক নয়, বরং চাঁদাবাজি, বালুমহাল, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়িক বিরোধ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে।
গিয়াস কাদের চৌধুরী বলেন, “আমি শান্তির রাউজান চাই। প্রশাসনকে বলেছি, সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ১৬টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১১টি রাজনৈতিক। আটটি মামলায় আংশিক গ্রেফতার হয়েছে, বাকিগুলোতে তদন্ত চলছে। ইউএনও জিসান বিন মাজেদ জানান, সন্ত্রাসীদের অবস্থান ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার গুগল ম্যাপ তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশা করছেন তিনি।