সর্বশেষ

পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত বাংলাদেশি দুবাই যাওয়ার কথা বলে দেশ ছাড়ে

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫১
পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত বাংলাদেশি দুবাই যাওয়ার কথা বলে দেশ ছাড়ে

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি তরুণ রয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম। নিহত ওই তরুণের নাম ফয়সাল হোসেন (২৫)। তিনি দেড় বছর আগে বাংলাদেশ ছাড়েন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

 

গত শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অভিযানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) ১৭ জন নিহত হয়। সামা টিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। যদিও ওই প্রতিবেদনে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি। পরে পাকিস্তানি সাংবাদিক জাওয়াদ ইউসুফজাই ও জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী প্ল্যাটফর্ম মাহাজ এক্সে (টুইটার) ছবি প্রকাশ করলে মাদারীপুরের এক পরিবার ফয়সালকে শনাক্ত করে।

 

পাকিস্তানি সাংবাদিক জাওয়াদ ইউসুফজাইয়ের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যাণ্ডেলে দেওয়া পোস্ট

 

ফয়সালের বাড়ি মাদারীপুর সদরের কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোট দুধখালী গ্রামে। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি গ্রামের হাটবাজার ও ওয়াজ মাহফিলে তছবিহ, টুপি, আতর বিক্রি করতেন। আর্থিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে গত বছরের মার্চে দুবাই যাওয়ার কথা বলে দেশ ছাড়েন।

 

তার বড় ভাই আরমান মোড়ল বলেন, “ফয়সাল পরিবারের খরচ চালাতে দীর্ঘদিন তছবিহ, টুপি, আতর বিক্রি করত। হঠাৎ বলল দুবাই যাবে। এরপর থেকে আর দেশে ফেরেনি। ২০২৪ সালের মার্চে দেশ ছাড়ার ছয় মাস পরে সে একবার ফোন করে জানায় দুবাই আছে এবং ভালো আছে, তবে বিস্তারিত আর কিছু জানাত না।”

 

ফয়সালের চাচা আব্দুল হালিম মোড়ল জানান, গত ঈদুল আজহার সময় তারা প্রথম জানতে পারেন ফয়সাল আফগানিস্তানে আছে। “গোয়েন্দা পুলিশ আমাদের জানিয়েছিল, সে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। এরপর থেকে কোনো সঠিক তথ্য পাইনি।”

 

পরিবারের কর্তা আউয়াল মোড়লের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এদিকে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের বরাতে সামা টিভি জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানে ধর্মীয় প্রচারের নামে যাওয়া কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণ উগ্রপন্থি সংগঠনে যোগ দেন। এ ধরনের অভিযানে নিহতদের মধ্যে অন্তত দুই থেকে তিনজন বাংলাদেশি রয়েছে।

 

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কারাক জেলার দর্শ খেল গ্রামে শুক্রবার রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ১৭ জন নিহতের কথা বলা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, ফয়সাল সত্যিই পাকিস্তানে নিহত হয়েছেন কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার যাত্রাপথ, যোগাযোগ এবং আর্থিক উৎস নিয়েও অনুসন্ধান করছে।

 

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে অর্থনৈতিক কষ্ট, ধর্মীয় প্রচারণা এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে ফেলে তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করে জানান, বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি রপ্তানি হচ্ছে এ ধরনের ন্যারেটিভ চলমান ভিসা সংকটকে আরো তীব্র করবে। এমনিতেই কোনো দেশ বাংলাদেশিদের সহজে ভিসা দিতে চাচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই, পাকিস্তানে তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনা নতুন করে সে সংকটকে ঘনীভূতই করবে।

সব খবর