নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চর এলাকার জমি দখল ও নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুটি সশস্ত্র ডাকাত বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই বাহিনীর প্রধানসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার দুর্গম জাগলার চরে এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন— জাহাজমারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সামছুদ্দিন ডাকাত ওরফে ‘কোপা সামছু’, তার ছেলে মোবারক হোসেন, একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মা ডাকাত, আলাউদ্দিন মাঝি এবং সুখচর ইউনিয়নের রামচরণ এলাকার আলাউদ্দিন বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাগলার চরে কয়েকশ’ ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে। এ চরের অর্ধেক জমি খাস এবং বাকি অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন বা বয়ার সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির ছত্রচ্ছায়ায় সামছুদ্দিন ডাকাত ওই সব জমি অবৈধভাবে বিক্রি করে আসছিলেন। ভূমিহীনদের কাছে প্রতি একর জমি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। বিক্রয়কৃত টাকার একটি অংশ ওই জনপ্রতিনিধিদের কাছে যেত বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি জমি বিক্রির টাকা দেওয়া নিয়ে সামছুদ্দিনের সঙ্গে ওই জনপ্রতিনিধিদের বিরোধ তৈরি হয়। এর জেরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও চরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে আলাউদ্দিন বাহিনী।
মঙ্গলবার ভোরে আলাউদ্দিন বাহিনীর নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল জাগলার চরে প্রবেশ করলে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আসে। একপর্যায়ে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। এতে উভয় বাহিনীর প্রধানসহ একাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। পরে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে বিকেলে হাতিয়া থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে চরটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেতে বিলম্ব হয়। তিনি জানান, নিহত আলাউদ্দিনের মরদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে এবং অন্য চারজনের মরদেহ হাতিয়া থানায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চরে এবং কোস্ট গার্ড নদীপথে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।