রাজধানীর ভাটারা এলাকায় সম্প্রতি এক শিশুকে দিনে-দুপুরে ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে আবারও তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। শিশুটির বাবা চোখ ভেজা কণ্ঠে বলেন, “এলাকার এক খারাপ লোক ভয় দেখাইয়া আমার কচি মাইয়াডারে সর্বনাশ করছে। আমি গরিব মানুষ, কিন্তু আমি ন্যায়ের বিচার চাই।” বর্তমানে শিশুটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে দেশে ৬৬৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৩৯৭ জন। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৭৩ জনের বেশি নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। প্রতিদিন দুইজনেরও বেশি ভুক্তভোগী নির্যাতিত হচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত আট মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে ১৫ হাজার ৩৪টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৬০টির বেশি মামলা।
সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। চাঁদপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ধর্ষণের শিকার হন। গাজীপুরের শ্রীপুরে নাটকের শুটিংয়ের কথা বলে এক তরুণী নাট্যকর্মীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। ময়মনসিংহে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য বলছে, শুধু সেপ্টেম্বরে অন্তত ১৫৯ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা, যার ৫৪ শতাংশই শিশু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, ধর্ষণের ঘটনার বিচার দ্রুত সময়ে না হওয়ার কারণে ভুক্তভোগী পরিবার নিরুৎসাহিত হয় এবং অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। দীর্ঘসূত্রতা, দুর্বল তদন্ত এবং সামাজিক চাপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
আইনজীবীরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তদন্ত কর্মকর্তারা পর্যাপ্ত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন। আবার বিচার প্রক্রিয়া বছরের পর বছর ঝুলে গেলে ভুক্তভোগীরা নানা সামাজিক ও মানসিক চাপে মামলা চালিয়ে যেতে পারেন না।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল স্বীকার করেছেন, নানা সামাজিক কারণে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের অপরাধ দমনে তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় সামাজিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ, দ্রুত বিচার এবং সামাজিক সচেতনতা ছাড়া এ প্রবণতা কমানো সম্ভব নয়।