ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ২১ বছর পার হলেও এখনো চূড়ান্ত বিচার হয়নি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের সেই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন এবং অন্তত ৩০০ জন আহত হন। প্রাণে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা, যিনি পরে টানা ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনা করেন।
এই ঘটনায় হত্যা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা দায়ের হয়। মামলার বিচারের চূড়ান্ত রায় বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এর আগে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে মামলাটির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আপিল শুনানি করছে। গত ১৭ জুলাই থেকে শুনানি শুরু হয় এবং চার কার্যদিবস ধরে তা অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, "রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এখন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে আদালত রায় দেবে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।"
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, "এই মামলায় বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও বিচার বিভাগের অপব্যবহার হয়েছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ন করেছে।"
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আরও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কিন্তু, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে দেন এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেন। পরে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারকরা বলেন, "এই ঘটনা সুষ্ঠু, স্বাধীন ও পেশাদার তদন্তের মাধ্যমে আবারও অনুসন্ধান করা উচিত।"
বর্তমানে সব আসামি জামিনে মুক্ত। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং সেটির শুনানি চলমান।