জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কেবল একজন সামরিক যোদ্ধা নন, তাঁর সুদূরপ্রসারী যুদ্ধ কৌশল, বিশেষ করে গেরিলা যুদ্ধের নীতি, মুক্তিযুদ্ধে জনসম্পৃক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখে। সীমিত অস্ত্র ও বিচ্ছিন্ন শক্তিকে সংগঠিত করে তিনি যে কৌশলগত কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন, তা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ নিশ্চিত করে।
ওসমানীর জীবন, নেতৃত্ব ও যুদ্ধ দর্শনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে যাত্রাপালা ‘জেনারেল ওসমানী’। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত যাত্রাশিল্পীদের অংশগ্রহণে এ প্রযোজনাটি হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার মিলনমেলা। মাত্র আট দিনের আবাসিক মহড়ার মধ্য দিয়ে নির্মিত এই যাত্রা পালা সময় ও সম্পদের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে শৈল্পিক শৃঙ্খলা, দলগত চর্চা এবং নিবিড় গবেষণার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
যাত্রা পালাটিতে গেরিলা যুদ্ধের নীতিকে নাটকীয় কাঠামোয় উপস্থাপন করা হয়েছে হঠাৎ আঘাত, দ্রুত সরে যাওয়া, সাধারণ মানুষের সহায়তা এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের কৌশল। সংগীত, সমবেত গান, নৃত্য ও কথকতার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্র ও গ্রামীণ জীবনের টানাপোড়েন দৃশ্যমান হয়েছে। বহুস্বরের অভিনয় ও দলগত ছন্দে শিল্পীরা ওসমানীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ জাতির প্রতিচ্ছবি নির্মাণ করেছেন।
নাট্যনির্দেশনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খান, যিনি ঐতিহাসিক তথ্য, লোকজ নাট্যভাষা এবং সমকালীন মঞ্চভাবনার সমন্বয়ে যাত্রার ঐতিহ্যকে নতুন করে পাঠ করার প্রয়াস নিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় ওসমানীর গেরিলা যুদ্ধের দর্শন, নেতৃত্বের মানবিক দিক এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নাট্যরূপে আবির্ভূত হয়েছে।
‘জেনারেল ওসমানী’ যাত্রাপালা কেবল একটি মঞ্চপ্রযোজনা নয়; এটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, প্রজন্মের মাঝে ইতিহাসের বোধ জাগ্রত করা এবং যাত্রাপালার ঐতিহ্যগত শক্তিকে জাতীয় চেতনার বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উদ্যোগ।