বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকা এখন নামসর্বস্ব দলের ভারে ভারাক্রান্ত। নির্বাচন কমিশনের নথি ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, অনেক দল রয়েছে যাদের নেই স্থায়ী কার্যালয়, নেই নিয়মিত দলীয় কার্যক্রম, এমনকি বছরের পর বছর ধরে নেই কোনো কার্যকর কমিটি। অথচ এসব দল এখনও নিবন্ধিত, এবং কমিশন নতুন করে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র বলছে, কিছু দল কেবল নামেই সক্রিয়—নির্বাচনের সময় কাগজপত্র জমা দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো রাজনৈতিক উপস্থিতি নেই। অনেক দলের নেতাকর্মীরা কোথায়, কী করছেন, তা কমিশনেরও অজানা। অথচ এসব দলকে কেন্দ্র করে বিভক্তি, দ্বন্দ্ব এবং নতুন নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়ছে।
কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দেখছি, কিছু নিবন্ধিত দল বছরের পর বছর কোনো সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। এমনকি তাদের কোনো বৈধ কার্যালয়ও নেই। তবু তারা নিবন্ধিত দল হিসেবে তালিকায় রয়ে গেছে।”
নতুন করে নিবন্ধনের উদ্যোগের পেছনে রয়েছে দলীয় বিভাজন। একাধিক রাজনৈতিক দলের ভেতরে বিভক্তি দেখা দেওয়ায়, বিভিন্ন পক্ষ নিজেদেরকে মূল দল দাবি করে কমিশনের কাছে নতুন নিবন্ধনের আবেদন করছে। কমিশন বলছে, আইনগত জটিলতা না থাকলে এবং কার্যক্রম স্বতন্ত্র হলে নতুন নিবন্ধন দেওয়া সম্ভব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি বাড়াতে পারে। নামসর্বস্ব দলগুলো শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল হিসেবে টিকে আছে, বাস্তব রাজনৈতিক ভূমিকা নেই। এতে গণতন্ত্রের বহুত্ববাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ভোটারদের সামনে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা নিবন্ধিত দলগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। যেখানে দলীয় সক্রিয়তা, সাংগঠনিক কাঠামো, এবং রাজনৈতিক ভূমিকা মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই প্রক্রিয়ায় যদি নামসর্বস্ব দলগুলো বাদ পড়ে, তাহলে নিবন্ধিত দলের তালিকা আরও বাস্তবসম্মত ও কার্যকর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।