ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত নেতাদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশের বামপন্থি দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা আরও বেগবান হতে পারে।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন এক ধরনের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে, যেখানে শাসন করছে বুর্জোয়া শ্রেণি। আগে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি উপনিবেশ ছিল, এখন স্বাধীন বাংলাদেশেও সেই শাসন কাঠামো চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর মনে হয়েছিল ফ্যাসিবাদ শেষ, কিন্তু এখন পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদ আরও চরম রূপ নিয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব এবং দক্ষিণপন্থিদের উত্থান এই সংকটকে গভীরতর করছে।”
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে টিএসসিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের নিয়ে একটি শক্তিশালী যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে হবে। ৫৪ সালের মত হযবরল নয়, বরং আদর্শিক ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত বামপন্থিদের ফ্রন্ট।”
সভায় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা বুকের রক্ত দিয়ে বিজয় এনেছে, কিন্তু এখন তারা হতাশায় ভুগছে, কারণ সংকটের সমাধানে সরকার বুর্জোয়া কাঠামো বজায় রেখেছে।”
বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ অভিযোগ করেন, “শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। তারা মব তৈরি করে প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “৭১-এর ইতিহাসকে ২৪ দিয়ে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা চলছে, যা জনগণ কখনো মেনে নেবে না।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মাসুদ রানা, মোশরেফা মিশু, আব্দুল আলী, সুনয়ন চাকমা ও নাসির উদ্দিন নাসু। বক্তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।