সর্বশেষ

কিশোরগঞ্জে ১৭৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় বেহালঃ ক্লাসরুম আছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই

জেলা প্রতিনিধি নীলফামারি
প্রকাশিত: ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ২৩:২০
কিশোরগঞ্জে ১৭৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় বেহালঃ ক্লাসরুম আছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ১৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সংকট চরমে পৌঁছেছে। চকচকে ভবন থাকলেও অনেক স্কুলে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, আবার কোথাও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। কোথাও স্কুল মাঠে বড় গর্ত, কোথাও প্রধান শিক্ষক নিজেই বিদ্যালয়ের কক্ষে বাসার জিনিসপত্র রেখে দিয়েছেন।

 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এসব বিদ্যালয়ে নিয়ম অনুযায়ী ৩০–৩৬ হাজার শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও ২০২৩ সালে ছিল ২৬,৭৮৯ জন, ২০২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ২১,৩৬০ জনে এবং ২০২৫ সালে তা আরও কমে ১৬,৬৬১ জনে। তিন বছরে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী কমেছে।

 

১৭৫টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক রয়েছেন প্রায় এক হাজার, তবে প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন মাত্র ৭২ জন। অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে ১০৩টি পদ শূন্য, যার মধ্যে ৪৩ জনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ৬০টি পদ এখনো শূন্য।

 

সরেজমিনে কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা। মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দোতলা ভবন থাকলেও পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী, চতুর্থ শ্রেণিতে কেউ নেই। প্রধান শিক্ষক জানান, “অনেকের জ্বর, তাই আসতে পারেনি।”

 

পুষনা শহীদ শরিফুল বিদ্যালয়ে মাঠে বিশাল গর্ত, গেটের সামনে কাঁদা পানি, চারপাশে দুর্গন্ধযুক্ত ডোবা। ক্লাসে শিক্ষার্থী ৪–৬ জন। প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য, ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন ছুটিতে।

 

মন্থনা সরকারি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ৩ জন, চতুর্থে ৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫ জন শিক্ষার্থী। হাজিরা খাতায় দেখা যায়, একজন শিক্ষক একটানা ১১ দিন অনুপস্থিত। প্রধান শিক্ষকও ছুটিতে।

 

ঘোনপাড়া মডেল বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন স্কুলের বারান্দায় বাসার জিনিসপত্র রেখেছেন। তিনি বলেন, “ভুল হয়েছে, আর রাখবো না।”

 

উপজেলা শিক্ষা অফিসার ড. মোসা. মাহমুদা খাতুন বলেন, “প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য, মিডডে মিল বন্ধ, অলসতা—সব মিলিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, “প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং হয়েছে, নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, “স্কুল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছুটি নিতে হলে নির্দিষ্ট কারণ জানাতে হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

সব খবর