দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের ওপর ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন, হয়রানি ও অধিকার হরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২ জন শিক্ষক। তারা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতারকৃত শিক্ষকদের মুক্তি, বহিষ্কারাদেশ বাতিল এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, বেআইনি গ্রেফতার, বহিষ্কার, একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা এবং সামাজিক অপপ্রচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করায় অনেক শিক্ষক বহিষ্কার, অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গবেষণা, প্রকাশনা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের পরিবর্তে শিক্ষক সমাজকে বিচ্ছিন্নকরণ, বিভাজন এবং অপমানের মাধ্যমে দমন করা হচ্ছে। একতরফা তদন্ত কমিটি গঠন করে অনেক শিক্ষককে একাডেমিক ও গবেষণাকর্ম থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, এমনকি চাকরিচ্যুতও করা হচ্ছে। মব সংস্কৃতি, ট্যাগিং এবং অনলাইন অপপ্রচারের মাধ্যমে শিক্ষকদের মানসিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।
বিবৃতিদাতারা উল্লেখ করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া বুদ্ধিজীবীদের উত্তরসূরিরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে জীবনযাপন করছেন। এ ধরনের পদক্ষেপ স্বাধীন বাংলাদেশ, শিক্ষার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি। এর ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং শিক্ষার মান ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা হুমকির মুখে পড়ছে।
তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নেওয়া মিথ্যা মামলা ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। এছাড়া দেশের শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় আন্তর্জাতিক শিক্ষক সমাজের সহযোগিতাও কামনা করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম প্রদীপ স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২০২ জন শিক্ষকের নাম যুক্ত রয়েছে। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ, অধ্যাপক ড. শবনম জাহান, অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. জামাল উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মুজিব উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান সরকার, অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ, অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা, অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন ইলিয়াস, অধ্যাপক ড. আজমল হুদা, অধ্যাপক ড. হাসান মুহাম্মদ ও অধ্যাপক আলাউদ্দিন খোকন প্রমুখ।