বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত মান নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই শিক্ষার্থীরা গড়ে আন্তর্জাতিকভাবে সপ্তম শ্রেণির সমতুল্য জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করছেন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সে একজন শিক্ষার্থী সাধারণত ১১ বছরের শিক্ষা সম্পন্ন করে। কিন্তু শেখার মান বিবেচনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬.৫ বছরের সমতুল্য শিক্ষা অর্জন করছে। অর্থাৎ, শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী বাংলাদেশ ৪.৫ বছর পিছিয়ে আছে। আন্তর্জাতিক টেস্ট স্কেলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গড় স্কোর ৩৬৮, যেখানে ৬২৫ স্কোর মানে ‘উন্নত অর্জন’ এবং ৩০০ স্কোর ‘ন্যূনতম অর্জন’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখস্থনির্ভর পাঠদান, বিশ্লেষণধর্মী শিক্ষার অভাব, এবং প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের কারণে শিক্ষার্থীরা বাস্তব দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা, রচনামূলক প্রশ্ন বুঝতে না পারা, এবং গণিত বা প্রোগ্রামিংয়ে দুর্বলতা এই সংকটের প্রতিফলন।
শিক্ষা প্রশাসন বলছে, সিলেবাস, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও শিক্ষকদের মান উন্নয়নে কাজ চলছে। তবে হঠাৎ করে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়, সময় ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ জানান, প্রাথমিক শিক্ষায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে মাধ্যমিকে যাচ্ছে, যা পরবর্তীতে পূরণ হচ্ছে না।
শিক্ষার মানঘাটতি অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দক্ষ কর্মীর অভাবে উৎপাদনশীলতা কমছে, কর্মসংস্থানে প্রতিযোগিতা হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্কোর ০.৪৮, যা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য উৎপাদনশীলতার মাত্র ৪৮ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট উত্তরণে বিশ্লেষণধর্মী পাঠদান, শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন, এবং পরীক্ষার ধরনে মৌলিক পরিবর্তন জরুরি। শিক্ষাকে শুধু সনদ নয়, দক্ষতা ও বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে হবে।