চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাসে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অক্টোবর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৪৩ শতাংশ কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই পতনের মূল কারণ তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি হ্রাস।
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি অক্টোবরে হয়েছে ৩০২ কোটি ডলার, যা গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮.৩৯ শতাংশ কম। অথচ অর্থবছরের শুরুতে, জুলাই মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২৪.৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আগস্টে রপ্তানি কমে ৪.৭৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৫.৫ শতাংশ, এবং অক্টোবরে তা আরও কমে যায়।
ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১,২৯৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ১.৪০ শতাংশ বেশি। অথচ অর্থবছরের শুরুতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকলেও চার মাস শেষে তা ২.২২ শতাংশে নেমে এসেছে।
বাজার সংকোচন ও শুল্কের প্রভাব
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা পাওয়ার পর সেখানকার ক্রেতারা আগেই বেশি পরিমাণে পোশাক সংগ্রহ করে রেখেছিল। ফলে বর্তমানে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় বাজারে চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণেই তৈরি পোশাক খাতে টানা তিন মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে।
তৈরি পোশাকের পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এই খাতে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এটি রপ্তানি খাতে একটি ইতিবাচক প্রবণতা দেখাচ্ছে।
তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, যেখানে জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। তবে এই খাতে রপ্তানি ১.৭২ শতাংশ কমেছে। শুধু অক্টোবর মাসে কৃষি পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১০ কোটি ২২ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৫৭ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি থাকলেও অক্টোবরের বড় ধস রপ্তানি প্রবণতায় উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে টানা তিন মাসের পতন সামগ্রিক রপ্তানি আয়কে নিচে নামিয়ে এনেছে। বাজার সংকোচন, আন্তর্জাতিক শুল্কনীতি এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবেলায় বহুমুখী রপ্তানি পরিকল্পনা ও বাজার বৈচিত্র্যকরণ এখন সময়ের দাবি।