ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (এমএফআই) সম্মিলিতভাবে একটি ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেলে এই ব্যাংকটি হবে ক্ষুদ্রঋণ খাতের প্রথম যৌথ ডিজিটাল ব্যাংক। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) চট্টগ্রামের হালিশহরে বেসরকারি সংস্থা মমতার কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এমআরএ’র এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি একসঙ্গে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়, তবে অনুমোদনের জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেবেন।
তিনি বলেন, “এমএফআইগুলো এখন ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহী। এই সেক্টরকে ডিজিটাল রূপান্তরে আনতে গেলে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আলাদা ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করা খুব ব্যয়বহুল। তাই যৌথভাবে একটি ডিজিটাল ব্যাংক গঠিত হলে সবাই সেই সুবিধা নিতে পারবে।”
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, “যদি একটি এমএফআই-অধিভুক্ত ডিজিটাল ব্যাংক থাকে, তারা সঞ্চয় সংগ্রহ করবে, নিজ খাতে ব্যবহার করবে এবং অন্য ক্ষুদ্র ঋণদাতাদেরও ঋণ দিতে পারবে। ব্যাংকগুলো যেমন এমএফআই সম্পর্কে জানে না, এমএফআই-ভিত্তিক ব্যাংক তাদের চাহিদা ভালোভাবে বুঝতে পারবে।”
তিনি জানান, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে। “তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এতগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দেবে না। তাই শীর্ষ ৩০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামীকাল একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে,” বলেন এমআরএ’র নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান।
তিনি এমএফআই প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা সবাই মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা দিন। আমরা সেটি গবেষণার মাধ্যমে আরও প্রফেশনালভাবে প্রস্তুত করব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাব।”
সভায় রাঙামাটি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও বান্দরবান অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেন।
এদিকে, এমএফআই পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে চলমান বিতর্ক সম্পর্কেও বক্তব্য দেন হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। নিয়মকানুন নির্ধারণের আগে কেউ কেউ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন, যা সেক্টরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো বোর্ডে ভারসাম্য আনা। অনেক প্রতিষ্ঠানেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
ক্ষুদ্রঋণ খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানের উচ্চ বেতন ও অনিয়ম নিয়েও তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। “এই সেক্টর প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করে। অথচ কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিলাসিতায় ডুবে আছে। এসব রোধে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে,” বলেন হেলাল উদ্দিন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মমতার প্রধান নির্বাহী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবক রফিক আহামদ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন এমআরএ পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাহী পরিচালক মো. নূরে আলম মেহেদী এবং হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করেন পরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন।