দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ বিশ্বব্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (আইসিএসআইডি)-এ অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সালিশি আবেদন করেছে। গত সোমবার, গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের পক্ষে আইনজীবীরা এই আবেদন জমা দেন।
আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম গ্রুপকে লক্ষ্য করে সম্পদ জব্দ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করেছে। এতে কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির দাবি জানানো হয়েছে।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলম পরিবার সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব দাবি করে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ২০০৪ সালের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় এই আবেদন করেছে। আইনজীবীরা বলেছেন, সরকারের পদক্ষেপগুলো “অযৌক্তিক ও ন্যায়বিচারবহির্ভূত” এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
এই আবেদন আসে গত ডিসেম্বরে পাঠানো “নোটিশ অব ডিসপিউট”-এর পর, যেখানে ৬ মাসের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে আইসিএসআইডি-তে যাওয়ার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে এস আলম গ্রুপ প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়ে নিয়েছে। যদিও সরকার এখনো এসব অভিযোগের পক্ষে শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলা অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে।
এস আলম গ্রুপের এই পদক্ষেপ অন্যান্য ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর জন্যও দৃষ্টান্ত হতে পারে, যারা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সুবিধা পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিল্পমালিকদের মতে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষে এমন আইনি অবস্থান নেওয়া জরুরি ও সময়োপযোগী।