টানা বৃষ্টি ও পূজাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশের খুচরা বাজারে সবজির দামে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কাঁচামরিচের দাম ক্রেতাদের নাভিশ্বাস ফেলাচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে কেজিপ্রতি কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো, সেখানে বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০০ টাকারও বেশি বেড়েছে মরিচের দাম।
বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে আগুন
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর তালতলা, শেওড়াপাড়া, হাতিরপুল ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম এক মাসের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। মরিচ গাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহও কমেছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি ও উৎসবের অজুহাতেই অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়াচ্ছেন।
কাওরান বাজারে সবজি কিনতে আসা কাওছার আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বৃষ্টি হলেই কি দাম বাড়বে! সবজি, মাছ, মাংস সবকিছুরই তো দাম অগ্নিসদৃশ। সাধারণ মানুষ খাবে কী? এখন মনে হচ্ছে ডিম নিয়েই বাড়ি যেতে হবে।”
সবজির চড়া দাম
বাজারে এখন লম্বা বেগুন কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গোল বেগুন মানভেদে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ও করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি সাধারণ সবজি যেমন—পটোল, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, শসা—সবকটির দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি বাজারে নেই।
অন্যদিকে লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পিস, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজিতে। শাকপাতার বাজারেও চড়া দাম লক্ষ্য করা গেছে—লালশাক ২০ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, ডাটা শাক ৪০ টাকা।
মাছ-মাংসেও চাপ
সবজির পাশাপাশি মাছ ও মাংসের দামও বেড়েছে। সোনালি কক মুরগি কেজি ৩১০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৫৯০ টাকা, আর খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা এবং কলিজা ৭৮০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে ইলিশ মাছের দামও আকাশচুম্বী। এক কেজি ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ২,৩০০ থেকে ২,৫০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২,১০০ টাকা এবং ছোট ইলিশ ৬৫০ থেকে ১,১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নদীতে ধরা ইলিশ ধরা ও বিক্রিতে মধ্যরাত থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় দাম আরও বেড়েছে।
দেশি মাছের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। শিং মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি শিং ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা এবং চিংড়ি ৮০০ থেকে ১,৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ভোক্তাদের ক্ষোভ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, বাজারে সরকারের তদারকি দুর্বল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। একবার দাম বাড়ালে আর কমাতে চান না তারা। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব)-এর সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন,
প্রতি বছরই উৎসব বা বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। সরকারের উচিত সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি এনে শহরে বিক্রির ব্যবস্থা করা। এতে একদিকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন, অন্যদিকে ভোক্তারা স্বস্তি পাবেন।
টানা বৃষ্টি, উৎপাদন সংকট এবং বাজার সিন্ডিকেট—এই তিনের মিশ্রণে রাজধানীর বাজার এখন ক্রেতাদের জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে। ভোক্তাদের প্রত্যাশা, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, নইলে নিত্যপণ্যের এই অগ্নিমূল্য তাদের দৈনন্দিন জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।