সর্বশেষ

বৈদেশিক ঋণে নতুন রেকর্ড, মাথাপিছু ঋণ ৭৭ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:২৬
বৈদেশিক ঋণে নতুন রেকর্ড, মাথাপিছু ঋণ ৭৭ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে
মাথাপিছু ঋণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১২.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। এই হিসাবে দেশের প্রতি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ এখন প্রায় ৬৩৮ ডলার বা ৭৭ হাজার ৪৩৩ টাকা।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাত্র ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮৪৩ কোটি ডলার। মার্চে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৪.৮ বিলিয়ন ডলার, যা জুনে দাঁড়ায় ১১২.১৬ বিলিয়নে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অতিক্রম করে।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, অবকাঠামো প্রকল্পে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ—এই তিনটি প্রধান কারণে ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির তুলনায় ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধের চাপও বেড়েছে।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতেও বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের ঋণে ঝুঁকেছে অনেকে।

 

বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের অংশ ৮২ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতের অংশ ১৮ শতাংশ। জুন শেষে সরকারি খাতের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৭ কোটি ডলার, যা মার্চে ছিল ৮,৪৯২ কোটি। বেসরকারি খাতের ঋণ জুনে ছিল ১,০৯৭ কোটি ডলার, যা মার্চের তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত।

 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “দেশের বিদেশি ঋণের বড় অংশ সরকারের, যা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়। তবে অতীতে কিছু প্রকল্পে অপচয় হয়েছে, যা এখন বন্ধ করা জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “জিডিপি অনুপাতে ঋণ এখনো সহনীয় হলেও সুদ ও কিস্তি পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এই চাপ সামলানো কঠিন হবে।”

 

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪১.১৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১০ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। প্রবাসী আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে, আর ডলারের বিনিময় হারেও কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে।

সব খবর

আরও পড়ুন

ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি কমছে, নাজুক হচ্ছে অর্থনীতি

ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি কমছে, নাজুক হচ্ছে অর্থনীতি

দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনায় গভীর ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি

আইএমএফের কড়া সতর্কবার্তা দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনায় গভীর ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে আরও পতন, সূচক সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

শেয়ারবাজারে আরও পতন, সূচক সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

সয়াবিন তেল লিটারে বাড়তে পারে ৯ টাকা ২৭ পয়সা

ফের বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম সয়াবিন তেল লিটারে বাড়তে পারে ৯ টাকা ২৭ পয়সা

শুল্কের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধাক্কায় পোশাক খাতজুড়ে উদ্বেগ

টানা তিন মাস রপ্তানি হ্রাস শুল্কের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধাক্কায় পোশাক খাতজুড়ে উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কিনছে বাংলাদেশের তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কিনছে বাংলাদেশের তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান

অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ

তৈরি পোশাক খাতে বড় ধস অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ

নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

১২ মাসে ১৮২ কারখানা বন্ধ, কর্মসংস্থানে ধস নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত