বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে পতন অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসেও রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর নভেম্বরের তুলনায় এ বছর একই মাসে রপ্তানি কমেছে ২৩ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৮৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এ নিয়ে টানা চার মাস ধরে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি চলছে।
যদিও অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বর মাসে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩৮২ কোটি ডলার, অর্থাৎ নভেম্বর মাসে বেড়েছে প্রায় ৮ কোটি ডলার বা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তবে বছরওয়ারি তুলনায় পতনের ধারা কাটেনি।
অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস, অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট রপ্তানি বেড়েছে ০.৬২ শতাংশ। এ সময়ে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার তিন কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ১,৯৯১ কোটি ডলারের চেয়ে সামান্য বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম মাস জুলাইয়ের অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিই এ পাঁচ মাসের সামগ্রিক হিসাবকে ইতিবাচক রাখছে।
গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সর্বোচ্চ জাহাজীকরণের চেষ্টা করেন। যুক্তরাষ্ট্র ৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এর আগে পাঠানো পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক না লাগায় জুলাইয়ে রপ্তানি বাড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ। কিন্তু আগস্ট থেকে পতন শুরু হয়। আগস্টে রপ্তানি কমে প্রায় ৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৫ শতাংশ এবং অক্টোবরে ৭ শতাংশ। নভেম্বরেও সেই ধারাই বজায় থাকে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তৈরি পোশাকসহ অধিকাংশ প্রধান রপ্তানি পণ্যে এবার নেতিবাচক প্রবণতা ছিল। নভেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশ। এ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩১৪ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ৩৩১ কোটি ডলার।
বিজিএমইএ পরিচালক এবিএম শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চীনের আগ্রাসী রপ্তানিই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্ক থাকায় তারা এখন ইইউতে কম দামে বিপুল পরিমাণ পণ্য পাঠাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে। তিনি বলেন, পণ্যের ‘নেভার আউট অব স্টক (এনওএস)’ ক্যাটেগরিতে চীনের প্রতিযোগিতা তীব্রতর হয়েছে। কারণ তাদের নিজস্ব কাঁচামাল–ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে দাম কমানো সহজ।
পোশাকের পাশাপাশি কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশ; আয় হয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে পতন ৮ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশ। নভেম্বরে চামড়া রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশের মতো, যদিও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৫ শতাংশ। হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ রপ্তানিতে পতন ৯ শতাংশের বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক মন্দা, চাহিদার সংকট এবং প্রতিযোগী দেশের আগ্রাসী মূল্যনীতি—সব মিলিয়েই বাংলাদেশের রপ্তানিতে চাপ বাড়ছে।