নীতিসহায়তা না পেলে পোশাক কারখানা বন্ধের সংখ্যা আরও বাড়বে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক খাতের প্রতিনিধিরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত এক বছরে নানা সংকট, বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসায়িক জটিলতার কারণে ১৮২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রফতানি আদেশ কমা, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে ধস এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন কার্যক্রম চালাতে নির্দিষ্ট ও কার্যকর নীতি কাঠামোর অভাবেও ভুগছে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান সংকট ও পুনরুদ্ধারের পথ” শীর্ষক আলোচনায় এসব বক্তব্য তুলে ধরেন বক্তারা। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ পাভেল। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাতে এবং ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিধি-নিয়ম শিথিলকরণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের জন্য স্বস্তিকর পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। শুধু সুদের হার বা বন্দর সমস্যা সমাধান করলেই হবে না; ব্যবসার জন্য সামগ্রিক ও বৈশ্বিক মানসম্পন্ন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, “বেছে-বেছে ছোট ছোট নিয়ম তৈরি করলে লাভ নেই। ব্যবসায়ীরা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ না পেলে বিনিয়োগ স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে।”
এ সময়ে তিনি নির্বাচিত ও দায়বদ্ধ সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মন্তব্য, নির্বাচিত সরকার না থাকলে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীনতায় ভোগেন, আর সমস্যার সমাধানে জবাবদিহিতার সুযোগ থাকে না।
সভায় বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, বিদ্যুৎ, দক্ষতার ঘাটতি, শ্রমিক সমস্যা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বহু প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকে বাংলাদেশে বাণিজ্য নিয়ে আসে, কিন্তু পরে বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসনে জটিলতা তৈরি করে। সম্প্রতি বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে বহু নমুনা নষ্ট হওয়ায় নতুন মৌসুমের আদেশও ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানান তিনি।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, সরকারের কাছে একটি সভা পেতে ১২০ দিন অপেক্ষা করতে হয়, এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যাহত হয়। তিনি জানান, বিজিএমইএ, বিটিএমএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএসহ খাতে মোট বিনিয়োগ প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার, আর বছরে রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার। এসব সাফল্যের পরও নীতিগত সুবিধা না থাকায় খাতটি চাপে রয়েছে।
সরকারি আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাতের প্রতিনিধি হয়েও অনেক সময় তাদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অন্যদিকে বিজিবিএ সভাপতি মোহাম্মদ পাভেল বলেন, সরকারের ৪৪.৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক রোডম্যাপ নেই। বায়িং হাউজগুলো ভবিষ্যৎ বাজার নিয়ে কাজ শুরু করলেও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে না।
যদি নীতিসহায়তা না বাড়ে, তবে পোশাক শিল্পে কারখানা বন্ধ ও কর্মসংস্থান সংকট আরও গভীর হবে বলে প্রতিনিধিরা সতর্ক করেন।