সর্বশেষ

বিএলএফের গবেষণা

৭৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৫৭
৭৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না

দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনযাত্রা এখনও ন্যূনতম মানবিক মানদণ্ডের নিচে। বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পোশাক খাতের ৭৮ শতাংশ শ্রমিক তাঁদের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না, এবং প্রায় ৩২ শতাংশ শ্রমিক ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম আয় করেন।

 

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএলএফ ও যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটস ল্যাব যৌথভাবে পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় সহযোগিতা করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা গুডউইভ, অর্থায়ন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার।

 

গবেষণার শিরোনাম ছিল— ‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম: ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে দিকনির্দেশনা’।

 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি আটজনের একজন শ্রমিক ঋণের জালে বন্দি, এবং সাব-কন্ট্রাক্টেড ও মিশ্র চুক্তিভিত্তিক কারখানাগুলোয় ১২ ঘণ্টার শিফট বা অতিরিক্ত সময় কাজ করা এখন নিয়মিত ঘটনা।

 

জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রমের বাস্তব চিত্র

 

গবেষণায় বলা হয়, পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলের নিম্নস্তরে এখনও জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম বিদ্যমান। শিশুশ্রমিকদের ৮০ শতাংশ সাব-কন্ট্রাক্টেড কারখানায় কাজ করে এবং ৯৯ শতাংশ শিশু সপ্তাহে ৩৬ ঘণ্টার বেশি শ্রম দেয়। এদের বেশিরভাগকেই ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না।

 

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ৯৮ শতাংশ শিশুশ্রমিক বর্তমানে স্কুলে যায় না, যার প্রধান কারণ আর্থিক সংকট। চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিশুশ্রমের হার ঢাকার তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স সংক্রান্ত নথি জাল করে শিশুদের কাজ দেওয়ার ঘটনাও সাধারণ।

 

গবেষণার সুপারিশ

 

প্রতিবেদনটি বলছে, অর্থনৈতিক কষ্টই জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রমের মূল কারণ, তাই সব খাতে ন্যায্য ‘জীবিকা নির্বাহযোগ্য মজুরি’ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বজায় রাখতে সরকার ও শিল্পমালিকদের সমন্বয়ে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।

 

গবেষণায় আরও বলা হয়, অদৃশ্যমান সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা ও হোম-বেজড উৎপাদন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে, যাতে শ্রম অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতামত

 

অনুষ্ঠানে বিএলএফ-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এএইচএম মোরশেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন প্রোগ্রাম অফিসার মো. জুবায়ের আলম। উপস্থিত ছিলেন গুডউইভের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর শাহিনুর রহমান ও বিএলএফ সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ইয়াসিন আরাফাত।

 

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফোর্সড লেবার অ্যাক্ট-এর প্রেক্ষিতে পোশাক শিল্পে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম নির্মূল করা অত্যন্ত জরুরি।
 

তাঁরা সরকার, শিল্পখাত ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে আরও নৈতিক, মানবিক ও টেকসই করার আহ্বান জানান।

সব খবর

আরও পড়ুন

ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি কমছে, নাজুক হচ্ছে অর্থনীতি

ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি কমছে, নাজুক হচ্ছে অর্থনীতি

দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনায় গভীর ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি

আইএমএফের কড়া সতর্কবার্তা দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনায় গভীর ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে আরও পতন, সূচক সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

শেয়ারবাজারে আরও পতন, সূচক সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

সয়াবিন তেল লিটারে বাড়তে পারে ৯ টাকা ২৭ পয়সা

ফের বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম সয়াবিন তেল লিটারে বাড়তে পারে ৯ টাকা ২৭ পয়সা

শুল্কের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধাক্কায় পোশাক খাতজুড়ে উদ্বেগ

টানা তিন মাস রপ্তানি হ্রাস শুল্কের চাপ ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার ধাক্কায় পোশাক খাতজুড়ে উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কিনছে বাংলাদেশের তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কিনছে বাংলাদেশের তিন শিল্প প্রতিষ্ঠান

অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ

তৈরি পোশাক খাতে বড় ধস অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৪৩ শতাংশ

নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত

১২ মাসে ১৮২ কারখানা বন্ধ, কর্মসংস্থানে ধস নীতিগত সংকট ও বিনিয়োগ অনিশ্চয়তায় বিপর্যস্ত গার্মেন্টস খাত