বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল, সোশ্যাল ও এক্সিম—একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতের দীর্ঘদিনের দুর্বলতা, তারল্য সংকট ও ঋণখেলাপির বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শেষবারের মতো শুনানি শুরু হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে এই পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকায়, যেখানে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার ৭৭ শতাংশ, যার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রভিশন ঘাটতি ৭৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
একীভূতকরণের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার ২৫ হাজার কোটি চাওয়া হয়েছে বাজেট সহায়তা হিসেবে এবং ১০ হাজার কোটি আসবে আমানত বিমা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে—যার জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, এই উদ্যোগের অর্থায়ন হবে জনগণের টাকায়।
তবে এক্সিম ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেছেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটি দখল করে লুটপাট করেছে, এখন প্রকৃত মালিকদের মতামত ছাড়াই একীভূতকরণ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাংক একীভূতকরণ একটি স্বেচ্ছাপ্রসূত ও অডিটনির্ভর প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে জোর করে একীভূত করলে সংকট আরও বাড়তে পারে। তবে ব্যাংক বন্ধ হলে গ্রাহকের ক্ষতি হবে, একীভূত হলে অন্তত আমানতের নিরাপত্তা বাড়বে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, এই উদ্যোগ রাজনৈতিকভাবে জটিল এবং তদবির অর্থনীতির নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে, যা বন্ড ও বিদেশি সহায়তার মাধ্যমে সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে, এই একীভূতকরণ ব্যাংক খাতের জন্য বড় পরিবর্তন হলেও, এটি সংকটের সমাধান নাকি নতুন অনিশ্চয়তার সূচনা—তা নির্ভর করছে বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও দক্ষতার ওপর।