রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চিত ব্যবসায়িক পরিবেশ ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ প্রান্তিকে এফডিআই এসেছে মাত্র ১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯৩.৪৬% কম। একইসঙ্গে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদ ও করহার, এবং সহায়ক অবকাঠামোর অভাব বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহী করছে। ড. মুস্তফা কে মুজেরি মনে করেন, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। পলিসি এক্সচেঞ্জের মাসরুর রিয়াজ ও বিআইআইএস-এর ড. মাহফুজ কবিরও একই মত পোষণ করেন।
সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনা করলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) আপাতত মাত্র পাঁচটি ইজেড উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বেজার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “১০ বছরে ১০টি ইজেড তৈরি করাই যথেষ্ট।”
অবকাঠামোগত দুর্বলতা বিনিয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাঘাট, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইউটিলিটি সেবা না থাকায় অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ গুটিয়ে নিচ্ছেন।
ইপিজেডেও বিনিয়োগ কমেছে ১৯.৫৯%। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিনিয়োগ কমেছে ২২.৩৩%, যদিও রপ্তানি বেড়েছে ২২.৪১%। বেপজার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগ বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কর ও সুদহার যৌক্তিককরণ, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সিপিডির তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটাতে দক্ষ জনশক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি জরুরি।”
সব মিলিয়ে, বিনিয়োগের আস্থা ফেরাতে এখনই সময় গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার। না হলে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের স্বপ্ন আরও দূরে সরে যাবে।
সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ