বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিমুখী খাত পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ এবং উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর, প্রেক্ষিতহীন ও শিল্পের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর’ বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ অবস্থান জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা শিল্পখাতের বাস্তবতা ও উদ্দেশ্যকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। বিজিএমইএ’র দাবি, এসব মন্তব্যে যেন ইচ্ছাকৃতভাবে শিল্পের গুরুত্ব খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, বিজিএমইএ সভাপতি গত চার মাস ধরে পোশাক শিল্পের নীতি প্রণয়ন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং চলমান সংকট মোকাবিলায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের অনুরোধ জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখনো সেই একান্ত সাক্ষাৎ হয়নি। অথচ সাম্প্রতিক মন্তব্যে দেখানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নাকি ইতোমধ্যেই আলোচনা হয়েছে।
বিজিএমইএ ব্যাখ্যা করে বলেছে, বিশেষ সহকারী ও উপ–প্রেস সচিব যেই সভার কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি ছিল এলডিসি উত্তরণ-সংক্রান্ত একটি সাধারণ পর্যালোচনা সভা। সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা এবং অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। এটিকে পোশাক শিল্প বা বিজিএমইএ’র জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হিসেবে উপস্থাপন করা সম্পূর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তিকর। সংগঠনের ভাষ্য, কোনো সাধারণ পাবলিক সভায় উপস্থিত থাকা এবং শিল্পখাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্দিষ্ট একান্ত বৈঠক দুই বিষয় একই নয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি গভীর হতাশা থেকে মন্তব্য করেছিলেন “চার মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েও আমরা পাইনি। অথচ স্টারলিংকের স্পেসএক্স কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট এলে তার সঙ্গে দেখা করা হয়। যে প্রতিষ্ঠান ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলছে, অথচ ৪০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিখাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নেই, এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।”
বিজিএমইএ দাবি করে, এই বক্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন। কিন্তু সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার মন্তব্যে সেই বক্তব্য বিকৃত ও প্রেক্ষিতহীনভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে শুধু বিভ্রান্তি তৈরি হয়নি, বরং দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখি শিল্পের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
সংগঠনটির মতে, পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদানকারী শক্তি। রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস। তাই এই শিল্প সম্পর্কে সরকারি প্রতিনিধিদের বক্তব্যে অতিরিক্ত সতর্কতা এবং পেশাদারিত্ব থাকা উচিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ আশা প্রকাশ করে যে, ভবিষ্যতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও উপ-প্রেস সচিব দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অধিক দায়িত্বশীল ও বাস্তবভিত্তিক থাকবেন। একই সঙ্গে পোশাক শিল্পের সংকট, রপ্তানি হ্রাস, শ্রমবাজার ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ দ্রুত শুরু করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।