বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক (আরএমজি) যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের প্রভাবে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্যে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের সামগ্রিক রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬২৭.৫৮ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৬১ শতাংশ কম। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয় ছিল ৩ হাজার ৮০২.৮৭ মিলিয়ন ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, শুধু তৈরি পোশাক খাতেই বড় ধাক্কা এসেছে। সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রফতানি ৫.৬৬ শতাংশ কমে ২.৮৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। নিট সেক্টরের রপ্তানি হয়েছে ১.৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫.৭৫ শতাংশ কম। বোনা সেক্টরে রপ্তানি হয়েছে ১.২১ বিলিয়ন ডলার, যা ৫.৫৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রপ্তানিকারকরা জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামো আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অর্ডার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে। অনেক ক্রেতা নতুন অর্ডার দিতে অনাগ্রহী, আবার কেউ কেউ ২০ শতাংশ পর্যন্ত রেসিপ্রোক্যাল শুল্কের অংশ সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এতে করে রপ্তানিকারকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "রপ্তানিকারকদের পক্ষে এই অতিরিক্ত চাপ বহন করা সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, শুল্ক সমন্বয় এবং বিদ্যুত-জ্বালানি সংকটের কারণে তারা দমবন্ধ পরিস্থিতিতে আছেন।"
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, "সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হ্রাসের প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার ধীরগতি ও তীব্র মূল্য প্রতিযোগিতা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে।"
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর (২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক) সময়ে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪.৭৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিট সেক্টরে রপ্তানি হয়েছে ৫.৫৮ বিলিয়ন ডলার (৪.৩১% প্রবৃদ্ধি) এবং বোনা সেক্টরে রপ্তানি হয়েছে ৪.৩৯ বিলিয়ন ডলার (৫.৪১% প্রবৃদ্ধি)।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বরে একক মাসে তৈরি পোশাক খাতের এই ধাক্কা দেশের সামগ্রিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আগামী দুই থেকে তিন মাস এই ধীরগতি চলতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বাজারে ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে পারে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে মান উন্নয়ন, নতুন ডিজাইন, কস্ট কন্ট্রোল এবং বাজার বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অন্যান্য বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। চীন ও ভারত তাদের মার্কিন বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে রপ্তানি বাড়াচ্ছে। এতে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, যদি দ্রুত সমাধান না খোঁজা হয়, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতি বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে।