সর্বশেষ

ইসলামী ব্যাংকে নজিরবিহীন অভিযান

আগাম নোটিশ ছাড়াই ২০০ কর্মী ছাঁটাই, ৪৯৭১ কর্মকর্তা ওএসডি

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২৪
আগাম নোটিশ ছাড়াই ২০০ কর্মী ছাঁটাই, ৪৯৭১ কর্মকর্তা ওএসডি

বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে শুরু হয়েছে এক নজিরবিহীন ছাঁটাই অভিযান। চাকরিবিধি লঙ্ঘন ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ব্যাংকটির প্রায় ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি (অন সার্ভিস ডিউটি) করা হয়েছে। তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন, তবে কোনো দায়িত্ব বা কর্মস্থলে থাকবেন না। ফলে ব্যাংকের ভেতরে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

 

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশে গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিতে মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে আহ্বান জানানো হলেও মাত্র ৪১৪ জন অংশ নেন। এদের দায়িত্ব বহাল থাকলেও পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া বাকিদের ওএসডি করা হয়। অন্যদিকে পরীক্ষার বিরোধিতা বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে সরাসরি ২০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

 

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর হাজারো কর্মীকে কোনো লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের বড় অংশ এসেছিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্য থেকে। এক সিনিয়র কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, “এস আলমের আমলে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকটিকে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন ব্যাংকের স্বার্থেই সবাইকে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।”

 

অন্যদিকে, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের দাবি, এক মাস আগে তাদের রিট আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক সেই আদেশ অমান্য করে নতুন পরীক্ষা নিয়েছে, যা বেআইনি। তারা আবারও আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে জানিয়েছেন।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য ভাইভা হয়। তবে কর্মীদের মান যাচাই পরীক্ষার বিষয়টি নতুন অভিজ্ঞতা।” তিনি আরও বলেন, “ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই কর্মী নিয়োগ বা যোগ্যতা যাচাই তাদের এখতিয়ারভুক্ত। তবে আইন ও নীতিমালার মধ্যে থেকেই তা করতে হবে।”

 

প্রসঙ্গত, এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিভিন্ন কৌশলে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছিল। এতে ব্যাংকটি গভীর সংকটে পড়ে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের প্রভাবমুক্ত করলেও অভিযোগ রয়েছে জামায়াতের করায়ত্ত্ব নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার নামে রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে চাকরিচ্যুত করা শুরু হয়।

 

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ এখন আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে হাজার হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তবে আদালত যদি কর্মীদের দাবিকে গুরুত্ব দেন, তবে ব্যাংককে বিকল্প সমাধান খুঁজতে হবে।

 

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের ব্যাংকিং খাতে এটি এক নতুন নজির, যেখানে কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে চাকরি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

সব খবর

আরও পড়ুন