নাসা গ্রুপের ১৬টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় অবস্থিত এসব কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা, কর্মসংস্থান ও জীবিকার সংকটে পড়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, আন্দোলনের কারণে অন্য কারখানায় কাজও পাচ্ছেন না। নাসা সুপার গার্মেন্টসের হেলপার নাসির উদ্দিন বলেন, “দুই মাসের বেতন বকেয়া। হাতে যা আছে, মাসখানেক চলবে। এরপর কী করব, জানি না।” একইভাবে ইমরান হোসেন ও তৌহিদুল ইসলাম জানান, পরিবার নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার আত্মগোপনে যান এবং অক্টোবরেই গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই কারখানাগুলোতে অস্থিরতা শুরু হয়। বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকট ও ক্রয়াদেশ না থাকায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ১০টি, গাজীপুরে ২টি, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা ইপিজেডে ২টি করে কারখানা বন্ধ হয়েছে। শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ জলকামান ও লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
২৩ সেপ্টেম্বর শ্রম ভবনে ত্রিপক্ষীয় সভায় সমঝোতা চুক্তি সই হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ অক্টোবর আগস্ট মাসের এবং ৩০ অক্টোবর সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আইনানুগ সব পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কোনো শ্রমিককে কালো তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন, সম্পত্তি বিক্রি করে বেতন পরিশোধ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, “কারখানা বন্ধের আগে শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিত ছিল।”
শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন টিপু সুলতান, যিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
শ্রমিক নেতারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নাসা গ্রুপের মতো বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে শুধু শ্রমিক নয়, পুরো শিল্প খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।