চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশ নতুন কোনো ঋণের প্রতিশ্রুতি পায়নি ভারত, চীন, জাপান ও রাশিয়ার কাছ থেকে। একই সময়ে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকেও কোনো নতুন প্রতিশ্রুতি আসেনি। তবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং আরও কিছু দেশ ও সংস্থা থেকে প্রায় ১২১ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এককভাবে এডিবি দিয়েছে সর্বোচ্চ ৫৮ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ১৬৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় পেয়েছে। বিপরীতে নতুন প্রতিশ্রুতি এসেছে ১২০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ নতুন প্রতিশ্রুতি কম হলেও পূর্ববর্তী চুক্তির অর্থ ছাড় অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিবি ছাড়াও আইডিএ দিয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি। অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশ মিলিয়ে এসেছে প্রায় সাড়ে ৬১ কোটি ডলার। তবে এ তালিকায় নেই ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া ও এআইআইবি।
অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে রাশিয়া শীর্ষে রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য দেশটি চার মাসে ৪০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার ছাড় করেছে। আইডিএ দিয়েছে ৪০ কোটি ৫২ লাখ ডলার, এডিবি প্রায় ২৫ কোটি, চীন ১৯ কোটি, ভারত ও জাপান ৮ কোটি এবং এআইআইবি দিয়েছে ২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থ ছাড় হয়েছিল ১২০ কোটি ডলার, যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬ কোটি ডলারে।
প্রতিবেদনে ঋণ পরিশোধের তথ্যও উঠে এসেছে। গত চার মাসে সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলো থেকে ১৬৬ কোটি ডলার ছাড় পাওয়া গেলেও একই সময়ে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছে ১৫৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে আসল ঋণ ১০২ কোটি এবং সুদ বাবদ ৫৬ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৪৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ঋণ প্রতিশ্রুতি কমে আসা বাংলাদেশের জন্য সতর্ক সংকেত। তবে পূর্ববর্তী চুক্তির অর্থ ছাড় অব্যাহত থাকায় চলমান প্রকল্পগুলোতে বড় ধরনের সমস্যা হবে না। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আরও সতর্ক হতে হবে।
সব মিলিয়ে ইআরডির জুলাই-অক্টোবর প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কম এবং ঋণ পরিশোধের চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।