শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের ৫৪ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, জুলাই আন্দোলনে সংঘর্ষ এবং অস্ত্র ও মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ পর্যালোচনা করে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছে, নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান জানান, “আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে বিষয়গুলো বিচার করেছি, যাতে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার না হয়।” তিনি দাবি করেন, অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯ জনকে আজীবন, ৮ জনকে চার সেমিস্টার, একজনকে তিন সেমিস্টার, ১১ জনকে দুই সেমিস্টার এবং ১৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেককে শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে টার্গেট করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি, বরং পূর্বের সংঘাত বা অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, এটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও চাপের মুখে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বহিষ্কৃতদের মধ্যে অনেকেই সক্রিয়ভাবে ক্যাম্পাসে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অপরাধমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। কিছু শিক্ষার্থীকে একই সঙ্গে একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা নিয়ে স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং শিক্ষক মহলের একটি অংশ মনে করেন, শাস্তির ধরন ও সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি, যা প্রকৃতার্থে বিচারের পরিবর্তে, একটি বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এতে প্রকৃতপক্ষে নিরীহ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না। তাদের দাবি, দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে অযথা শাস্তিপ্রাপ্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যথায় শিক্ষাজীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সামগ্রিকভাবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বলছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক পালাবদলের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে একাডেমিক পরিবেশকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।