সর্বশেষ

সঙ্গীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিল

বন্ধ হলো ১ লাখ ৩১ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:০৭
বন্ধ হলো ১ লাখ ৩১ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা বাতিল করেছে সরকার। ফলে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৪টি সম্ভাব্য পদে নিয়োগের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০২৫ সালের ২৮ আগস্ট ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা’তে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা নামে দুটি নতুন পদ যুক্ত করা হয়। কিন্তু ৩ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই দুটি পদ সংক্রান্ত নিয়ম ও যোগ্যতার অংশ বাদ দিয়ে নিয়োগ প্রস্তাবনা বাতিল করে।

 

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এই সিদ্ধান্ত নাগরিক সমাজকে হতাশ করেছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী গবেষণায় প্রমাণিত যে শিক্ষার্থীদের মনোজগতের বিকাশে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য। ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো বিরোধ নেই। বরং ধর্ম মানুষের চিন্তাকে পরিশীলিত করে, আর সংস্কৃতি ও খেলাধুলা মানবিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক।

 

তিনি প্রশ্ন তোলেন, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর চাপে কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? শিক্ষা তো কোনো গোষ্ঠীর বিষয় নয়, এটি জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ক্রীড়া জগতে বারবার পরাজয়ের পেছনে শিশুদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সেই ঘাটতিকে আরও বাড়াবে।

 

শিক্ষা গবেষক কে এম এনামুল হক বলেন, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সহায়ক বিদ্যালয় নীতিমালা জোরদার হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।

 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন সংগীত শিক্ষক ও একজন শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল। প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার ১৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে সমান সংখ্যক পদ ছিল।

 

শিক্ষাবিদরা আরও বলেন, শিশুদের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া চর্চা থেকে দূরে রাখলে তারা প্রযুক্তি ও ডিভাইস আসক্তিতে আরও বেশি নিমজ্জিত হবে। রাশেদা কে চৌধুরী উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানে অভিভাবকরা সন্তুষ্ট যে তাদের সন্তানরা ডিভাইস থেকে দূরে সরে আসছে। অথচ সরকার শিক্ষার্থীদের মনোজগতের বিকাশের বিষয়টি উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, ধর্মভিত্তিক কিছু দলের চাপের মুখে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রতি নতজানু অবস্থান প্রকাশ করে।

সব খবর

আরও পড়ুন

প্রাথমিক থেকে বাদ সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক

শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলবাদি প্রভাব প্রাথমিক থেকে বাদ সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক

ড্যাফোডিল–সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষের উত্তাপ এখনো ক্যাম্পাসজুড়ে

কাটেনি শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক ড্যাফোডিল–সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘর্ষের উত্তাপ এখনো ক্যাম্পাসজুড়ে

সাভারের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর সংকটের সংকেত

শিক্ষার্থীদের সহিংসতা সাভারের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর সংকটের সংকেত

পরিকল্পনাহীন সম্প্রসারণে উদ্বেগ, আসন পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ

উচ্চশিক্ষায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা পরিকল্পনাহীন সম্প্রসারণে উদ্বেগ, আসন পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ

১৩ বছরে কমেছে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকের সংখ্যা, বেড়েছে প্রতিষ্ঠান

শিক্ষক সংকটে দুর্বল ফল শিক্ষা খাতে ১৩ বছরে কমেছে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকের সংখ্যা, বেড়েছে প্রতিষ্ঠান

তিন ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সতর্কতা

তিন ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে ইউজিসির সতর্কতা

২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাসের হার

শিক্ষায় ‘গলদ’ না অন্য কিছু? ২১ বছরে এইচএসসিতে সর্বনিম্ন পাসের হার

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত