নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি মাত্র ১০ দিন। তবে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী মার্চের আগে বই পাওয়ার বিষয়ে শঙ্কায় রয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুযায়ী, এই শিক্ষাবর্ষের জন্য ২১ কোটি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে মাত্র ৫ কোটি বইই উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ হয়েছে।
বিগত দুই বছর ধরে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে বই পায়নি। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে কিছু জেলায় এপ্রিল পর্যন্ত সময় লেগেছিল। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে যথাসময়ে বই পৌঁছে দিতে এবার আগেভাগে দরপত্র আহ্বান করা হলেও মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বই রিটেন্ডার দেওয়ায় তিন মাস দেরিতে ছাপা শুরু হয়েছে। নবম শ্রেণির বইয়ের ছাপাও অজানা কারণে প্রায় আড়াই মাস আটকে রাখা হয়েছিল।
ছাপাখানার মালিকরা অভিযোগ করেছেন, পাঠ্যবই ছাপার নেপথ্যে রয়েছে এনসিটিবির কাগজ সিন্ডিকেট বাণিজ্য। দেশে শতাধিক কাগজ মিল থাকা সত্ত্বেও এনসিটিবি মাত্র পাঁচটি মিলের কাগজ ব্যবহার অনুমোদন দিচ্ছে। এছাড়া কিছু কর্মকর্তা কাগজের টন প্রতি ৭ হাজার টাকা কমিশন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এতে ছাপাখানাগুলো সংকট ও দেরিতে বই ছাপানোর সমস্যায় পড়েছে।
দ্বিগুণ সমস্যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের সময় মুদ্রণ শ্রমিক সংকট এবং নোট-গাইড ছাপার কারণে বাইন্ডার পাওয়া না যাওয়া। এসব কারণে পাঠ্যবই ছাপার গতিতে প্রভাব পড়বে, যা শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও শিখন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটাবে।
সরকার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। কিন্তু তা অর্জন হয়নি। এবারের শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিকের ২১ কোটি ৪৩ লাখ বই ছাপা হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়ের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তবে ছাপার অগ্রগতি সরকারি তথ্য ও মাঠ পর্যায়ের তথ্যের মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মাত্র ২৫ শতাংশের কিছু বেশি বই ছাপা হয়েছে, যেখানে এনসিটিবি দাবি করছে ৫০ শতাংশ।
বর্তমান সময়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী। সম্প্রতি তিনি ছাপাখানার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানুয়ারির ১ তারিখে শিক্ষার্থীদের অন্তত একটি বই পেতে তাগিদ দিয়েছেন। তবে কিছু কর্মকর্তার কারণে দেরি, অনিয়ম ও দুর্নীতি এখনো চলছেই।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে তৎপরতা, স্বচ্ছতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। দেরিতে বই হাতে পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসার সময়ও পিছিয়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মানে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।