শিক্ষা ক্যাডারে নজিরবিহীন বদলি-পদায়নের এক রাত পার হয়েছে গত ১১ ডিসেম্বর। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগের রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখা থেকে পৃথক ১৬টি আদেশে একযোগে ৪৭৫ জন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইতিহাসে এক দিনে এত সংখ্যক বদলি এর আগে কখনো হয়নি। এ ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনের ভেতরেই আলোচনায় এসেছে ‘বদলির চাঁদরাত’ শব্দটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর বদলি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে—এই যুক্তি দেখিয়ে এক রাতেই বিপুলসংখ্যক বদলি ও পদায়ন সম্পন্ন করা হয়। শুধু বদলিই নয়, একই দিনে ২ হাজার ৭০৬ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন ১ হাজার ৭১১ জন এবং সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ৯৯৫ জন। পাশাপাশি ৯৪ জনকে সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়।
বদলি ও পদায়নের এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বদলির ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। প্রশাসনিক ও অধ্যক্ষ পদে বদলি ছিল সবচেয়ে ‘মূল্যবান’ বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।
ডিআইএ ঘিরে অভিযোগ আরও গুরুতর। শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরেই এই দপ্তরকে ‘ঘুষের রাজ্য’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সম্প্রতি ডিআইএ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও, এর মধ্যেই কিছু বিতর্কিত কর্মকর্তার বদলি বাতিল ও পুনর্বহালের ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে কিছু কর্মকর্তা কাঙ্ক্ষিত পদে বহাল রয়েছেন।
এ ছাড়া সচিববিহীন এক মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় কয়েকটি সিন্ডিকেট বদলি ও পদায়নের মাধ্যমে নিজেদের বলয় শক্ত করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই সময়ে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতাদেরও ভালো পদে পদায়নের নজির পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে কলেজ শাখার যুগ্ম সচিব খোদেজা খাতুন দাবি করেছেন, প্রশাসনিক ব্যস্ততার কারণে একদিনে বেশি আদেশ হয়েছে এবং বদলি প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘চাঁদরাতের’ বদলি কি কেবল প্রশাসনিক প্রয়োজন, নাকি এর আড়ালে সক্রিয় ছিল প্রভাব, অর্থ ও রাজনৈতিক হিসাব?