বিশ্বব্যাপী চাকরিদাতাদের প্রত্যাশিত দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েটরা তাল মেলাতে পারছে না। কিউএস ওয়ার্ল্ড ফিউচার স্কিলস ইনডেক্স ২০২৫–এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দক্ষতা ও প্রস্তুতির দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।
ইনডেক্সে দেখা গেছে, চাকরিদাতাদের চাহিদানুযায়ী দক্ষতায় বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৩৯.১, যা ৮১টি দেশের মধ্যে ৬৭তম অবস্থান। একাডেমিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্কোর ৬৫.৭ এবং ভবিষ্যৎ শ্রমবাজারের প্রস্তুতিতে ৪২.৬। তবে অর্থনৈতিক রূপান্তরের সূচকে কোনো স্কোর পাওয়া যায়নি। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪৯.১। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি শীর্ষ তিনে রয়েছে যথাক্রমে ৯৭.৬, ৯৭.১ ও ৯৪.৬ স্কোর নিয়ে।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বও উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৯ লাখ ৬ হাজার, যা এক বছরের ব্যবধানে এক লাখের বেশি বেড়েছে। গত দশ বছরে এ সংখ্যা আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতে-কলমে শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগের অভাবই মূলত দক্ষতার ঘাটতির কারণ। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “প্রয়োজনীয় গবেষণাগার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানে দক্ষ হতে পারছে না।” একই মত প্রকাশ করেছেন বিডি জবসের সিইও একেএম ফাহিম মাশরুর, যিনি উচ্চশিক্ষা খাতে কর্মক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছেন।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা সর্বাধিক—মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৮১ শতাংশ। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে সুযোগ-সুবিধার সংকট থাকায় দক্ষতা উন্নয়নে বড় বাধা তৈরি হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ৮৭ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দক্ষতার ঘাটতির মুখে রয়েছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও অটোমেশনের কারণে আগামী কয়েক বছরে কর্মক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ানো, ইন্ডাস্ট্রি–একাডেমিয়া সম্পর্ক জোরদার করা এবং হাতে-কলমে শিক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি সম্ভব নয়।
সংখ্যায় গ্র্যাজুয়েট বাড়লেও মানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দক্ষতা উন্নয়নে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তরুণদের।