তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে। খসড়ার ওপর মতামত দিতে সংশ্লিষ্টদের সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত ইমেইলে বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবের কাছে মতামত পাঠানো যাবে।
অধ্যাদেশ প্রকাশের আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী বিভাজন থাকলেও খসড়া প্রকাশের পর তা রূপ নিয়েছে চতুর্মুখী অবস্থানে।
শিক্ষকদের মানববন্ধন ও ১১ দফা দাবি
বুধবার দুপুরে ঢাকার সাত কলেজে একযোগে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। “সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটি”র ব্যানারে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে তারা বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষা সংকুচিত হবে। একইসঙ্গে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের পদ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, এটি প্রকারান্তরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ।
শিক্ষকরা আরও দাবি জানান—কলেজের লোগো ও সম্পত্তি অক্ষুণ্ণ রাখা, বিদ্যমান বিষয় বিয়োজন না করা, সাত কলেজকে পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেলে রূপান্তর না করা এবং নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করার।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এম আতিকুজ্জামান বলেন, “এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে সাত কলেজকে কেন টার্গেট করা হলো? এটি একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র।”
শিক্ষার্থীদের বিভাজিত অবস্থান
অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, দ্রুত অধ্যাদেশ কার্যকর না হলে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবেন। তাদের দাবি, শিক্ষকদের আপত্তি আসলে অযৌক্তিক ষড়যন্ত্র।
তবে খসড়া অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে আনার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে অন্য সেশনের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বুধবার ঢাকা কলেজ শহিদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলেন, “এটি একটি বৈষম্যমূলক ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত। সংশোধন না হলে কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”
নারী শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, নতুন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে নারী শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা চান, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ বা ঢাকার বাইরের অন্য এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হোক।
সার্বিক পরিস্থিতি
সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ রয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশ প্রকাশের পর শিক্ষকরা ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার দাবি তুলেছেন, শিক্ষার্থীরা সমানভাবে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানাচ্ছেন, আর আন্দোলনরত একাংশ দ্রুত বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ইস্যুতে চারপক্ষীয় বিভাজন তৈরি হয়েছে।