২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হবে, যার মধ্যে মাধ্যমিকের বই ২১ কোটি ৯০ লাখ এবং নবম শ্রেণির বই প্রায় সাড়ে ৬ কোটি। তবে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই সময়মতো পৌঁছানো নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ১৪ কোটি বই এখনও ছাপার কাজ শুরু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আগামী মার্চ মাসের আগে শিক্ষার্থীরা সব বই পাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত বই ছাপার লক্ষ্য রেখেছিল। কিন্তু নবম শ্রেণির বইয়ের মধ্যে মাত্র ২০ লাখ বই ছাপা হয়েছে। বিদ্যালয়, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতে, পাঠ্যবই বিলম্বে শিক্ষার মানও প্রভাবিত হচ্ছে।
বিলম্বের জন্য ছাপাখানার মালিকরা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে দায়ী করছেন। তবে এনসিটিবি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দীর্ঘ সময় ধরে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের ক্রয়াদেশ অনুমোদন না দেওয়ায় টেন্ডার বাতিল হয়েছে। এর ফলে ছাপার প্রক্রিয়ায় অন্তত আড়াই মাসের বিলম্ব হয়েছে।
এছাড়া, পুনঃদরপত্রে অনেক ছাপাখানা প্রাক্কলিত খরচের তুলনায় অনেক কম দরে কাজ পেয়েছে। এতে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর প্রবণতা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়ের প্রতি ফর্মা সরকারি বাজেট ছিল ৩ টাকা ১৫ পয়সা, অথচ ছাপাখানা ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯ পয়সার মধ্যে কাজ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ন্যূনতম দর বইয়ের মান কমাতে প্রভাব ফেলছে।
এনসিটিবি বলেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বইয়ের উৎপাদন থেকে সরবরাহ পর্যন্ত তদারকি করছে ‘প্রি-ডিস্ট্রিবিউশন এজেন্ট’ (পিডিআই)। প্রাথমিকের ৩০ ভাগ বই ইতিমধ্যেই নিম্নমানের কাগজে ছাপা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বই সরবরাহের পর মান যাচাই করছে ‘পিএলআই এজেন্ট’। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, কিছু ছাপাখানা ও তদারকি সংস্থা বইয়ের মান যাচাই করার সময় অনিয়ম করছে, আর কাগজের মান উন্নত করার জন্য টাকা দাবি করা হচ্ছে।
এছাড়া, এনসিটিবির অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং সুবিধাভোগীদের সক্রিয়তা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদল সম্প্রতি এনসিটিবির দুই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি করেছে। তাদের অভিযোগ, কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষা করছেন এবং শিক্ষার্থীর কল্যাণে কার্যকর হচ্ছে না।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, পাঠ্যবই প্রাপ্তিতে বিলম্ব শিক্ষার ধারাবাহিকতাকে ব্যাহত করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বই না থাকলে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাবর্ষে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে না। সঠিক সময়ে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সুসংগঠিত তদারকি এবং মান নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সংশ্লিষ্টরা এখনো আশা করছেন যেন সরকারের বোধোদয় হয় এবং বই ছাপা ও বিতরণ দ্রুত শুরু করে।