সর্বশেষ

নদী বাঁচানোর উদ্যোগ কোথায়?

সংকটাপন্ন ৮১ নদীর অস্তিত্ব হুমকিতে

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৪২
সংকটাপন্ন ৮১ নদীর অস্তিত্ব হুমকিতে

বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা সরকারি হিসাবে ১,৪১৫টি হলেও বাস্তবে অন্তত ৮১টি নদী পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে বা চরম সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। অথচ নদীমাতৃক এই দেশে নদী রক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।

 

সিলেটের বাসিয়া নদী, খুলনার ভৈরব, রাজশাহীর বড়াল—এক সময়ের খরস্রোতা এসব নদী এখন দখল, দূষণ ও পলিজমার কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আরডিআরসির গবেষণায় দেখা গেছে, খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৫টি নদী সংকটাপন্ন, এরপর রাজশাহীতে ২০টি, রংপুরে ১৫টি, ঢাকায় ৪টি, সিলেটে ৩টি নদীসহ মোট ৮১টি নদী মৃত বা মরণাপন্ন।

 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ২৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। বর্ষায় ৬ হাজার কিলোমিটার নৌযান চলাচলের উপযোগী থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা কমে ৩,৮০০ কিলোমিটারে নেমে আসে। নদীপথ পরিবেশবান্ধব, যানজটমুক্ত ও ব্যয় সাশ্রয়ী হলেও নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এই পথও হুমকির মুখে।

 

পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অধ্যাপক আইনুন নিশাতের মতে, নদী মারা যায় তিনভাবে—ভৌতভাবে (প্রবাহ বন্ধ), জীববৈচিত্র্য হারিয়ে (জীবনপ্রবাহ নষ্ট) এবং রাসায়নিক দূষণে। বাঁধ, ব্রিজ, দখল, দূষণ ও নগরায়ণের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

২০১৩ সালের পানি আইন থাকলেও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, ২০টি নদী নিয়ে কাজ চলছে, ৯টি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে। তবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রম জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিস্তৃত না হওয়ায় বাস্তব অগ্রগতি নেই।

 

নদী রক্ষায় সংস্থাটি চারটি প্রধান পরামর্শ দিয়েছে: 
 

১. নিয়মিত খনন ও পলি অপসারণ করে নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনা 
২. শিল্পবর্জ্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগ 
৩. স্থানীয় জনগণকে নদী সংরক্ষণে যুক্ত করা 
৪. আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টনে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কার্যকর চুক্তি

 

নদী শুধু পানি নয়, এটি জীবনের অংশ। তাই নদী রক্ষায় এখনই সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদি ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ জরুরি। না হলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচয়ই একদিন হারিয়ে যাবে।

সব খবর