রাজধানীর মিরপুরে হযরত শাহ আলী (রহ.) মাজারে শতবর্ষী বটগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার বলেছেন, “এটি শুধু একটি গাছ কাটার ঘটনা নয়, বরং পাখি, প্রাণী ও মানুষের সাধনার আশ্রয় ধ্বংসের শামিল।” শনিবার (৪ অক্টোবর) মাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, “মাজার মানেই মিলনমেলা, গণতন্ত্রেরও আরেক নাম মিলনমেলা। কিন্তু আজ যা ঘটছে তা মিলনমেলার পরিপন্থী। শতবর্ষী গাছ কেটে দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। গাছ কেটে যারা অপরাধ করেছে, তারা ভবিষ্যতে মাজারও ভেঙে ফেলতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, দেশের বহু প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন একটি ঐতিহাসিক বটগাছ কেটে দেওয়ার মাধ্যমে প্রাণী ও পাখির আশ্রয়স্থল ধ্বংস করা হয়েছে। এ গাছ মাজারের ইতিহাস ও ভক্তির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিল।
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে প্রকৃত কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নেই। গরিব মানুষ সেখানে ঢুকতে পারে না। শিল্পকলা একাডেমিতে আমার ‘পাগলদের’ জায়গা নেই। সুতরাং ওটা সংস্কৃতি নয়, বরং পরিবর্তনের প্রয়োজন।”
মাজার কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কী সাহসে এই গাছ কাটা হলো? অনুষ্ঠান চলাকালীন সরকারের তিনজন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন, যাদের অসম্মান করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও বিস্মিত হয়েছেন—কীভাবে গান ও সাধনা বন্ধ করা হলো। এর জবাব আপনাদের দিতেই হবে।”
এ সময় সভাপতির বক্তব্যে কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রোমেল বলেন, “মাজার মানেই ভক্তি, সাধনা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চার স্থান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গণপরিসর ধ্বংস করা হচ্ছে। মাজারগুলোকে আঘাত করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বাউলশিল্পী মহারাজ আবুল সরকার, গণসংহতি আন্দোলনের লুৎফুন্নাহার সুমনা, জাতীয় নাগরিক পার্টির রাফিউল ইসলাম, বাংলাদেশ তরিকত পরিষদের দ্বীন মোহাম্মদ চিশতী, মাজারের ভক্ত তানভীর সুমন ও নাসির হোসেন প্রমুখ।
স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার মাজার প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতবর্ষী বটগাছের ডালপালা কেটে ফেলা হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি প্রকাশিত হলে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, মাজার কেবল ধর্মীয় নয়; এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসরের প্রতীক। তাই শতবর্ষী গাছ কাটা দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত।