প্রগতিশীল বাম ধারার প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিক্ষক অধ্যাপক যতীন সরকার আর নেই। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকাল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ও পলি আর্থ্রাইটিসে ভুগছিলেন তিনি। কয়েক মাস আগে একাধিক অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা সুস্থ হয়ে নেত্রকোনার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তবে গত জুনে শোবার ঘরের বারান্দা থেকে পত্রিকা আনতে গিয়ে পড়ে গিয়ে উরুর হাড়ে গুরুতর আঘাত পান। এরপর তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নতির পর ময়মনসিংহে নেওয়া হলেও সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যতীন সরকার। তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ ৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেন এবং ২০০২ সালে অবসর নেন। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
লেখক ও প্রাবন্ধিক হিসেবে তার প্রথম গ্রন্থ ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশের কবিগান’, ‘বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য’, ‘সংস্কৃতির সংগ্রাম’, ‘মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব’সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। শিশুদের জন্য রচিত ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ গ্রন্থটি বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালায় তিনি ‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’ ও ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’র জীবনী রচনা করেন। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী’, ‘প্রসঙ্গ মৌলবাদ’ ও ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’।
কৃতিত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কারসহ ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, মনিরুদ্দীন ইউসুফ সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।
তার মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উদীচীর ময়মনসিংহ কার্যালয়ে নেওয়া হবে। শেষকৃত্যের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।