ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হতে আরও সময় লাগছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এখনও জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উদ্বোধন সম্ভব হচ্ছে না।
২০২৪ সালের অক্টোবরে টার্মিনাল চালুর কথা থাকলেও গত এপ্রিলে বেবিচক তা পিছিয়ে বছরের শেষ নাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তি চূড়ান্ত করতে আরও ১–২ মাস এবং কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে ৫–৬ মাস সময় লাগবে। ফলে নির্ধারিত সময়েও উদ্বোধন অনিশ্চিত।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক জানিয়েছেন, চুক্তি সই হওয়ার পরই উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা যাবে। নির্মাণ কোম্পানি টার্মিনাল হস্তান্তর করার পর যন্ত্রপাতি পরীক্ষাসহ প্রস্তুতিতে ছয় মাস সময় লাগবে।
জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, সুমিতোমো করপোরেশন, সোইজিতস ও নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম টার্মিনাল পরিচালনা করবে। নিরাপত্তা তদারকি করবে বেবিচক। ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে প্রায় ছয় হাজার কর্মী প্রয়োজন হবে, যার মধ্যে চার হাজার নিরাপত্তা কর্মী চার শিফটে কাজ করবেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রথম দুই বছর যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা পরিচালনা করবে। ডেটা নিরাপত্তা থাকবে বেবিচকের আওতায়। টার্মিনাল চালুর আগে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, বিস্ফোরক শনাক্তকরণসহ সব যন্ত্রের ট্রায়াল রান পরিচালনা করবে জাপানি কনসোর্টিয়াম।
ব্যবসায়ী নেতারা দ্রুত টার্মিনাল চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে ভারত হঠাৎ করে তৃতীয় দেশের ট্রান্সশিপমেন্ট স্থগিত করায় রপ্তানিকারকদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে অদক্ষতা ও বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রাথমিক উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পূর্ণাঙ্গরূপে টার্মিনালটি চালুর প্রতিশ্রুতি দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। মোট খরচের মধ্যে ৫,০০০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার, বাকি এসেছে জাইকার ঋণ থেকে। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
নতুন টার্মিনালের ফ্লোর স্পেস ২.৩ লাখ বর্গমিটার। এতে থাকবে ১১৫টি চেকইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপার্চার ইমিগ্রেশন, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ও তিনটি ভিআইপি ডেস্ক। সম্পূর্ণ চালু হলে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা তিনগুণ বেড়ে বছরে ২.৪ কোটি এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে ১০ লাখ টনে পৌঁছাবে।