সর্বশেষ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত ও ভয়াল এক দিন

প্রকাশিত: ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৩৩
বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত ও ভয়াল এক দিন

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি ভয়াল দিন। সেদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে চালানো হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করে দলটিকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরতরে ধ্বংস করা।

 

সে দিন ভয়াল হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী ও সাংবাদিক। তাদের অনেকেই এখনও স্প্লিন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদে হামলা

 

তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সংঘটিত এ হত্যাযজ্ঞ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। হামলার পরপরই রাষ্ট্রযন্ত্র সক্রিয়ভাবে আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করে। সাজানো হয় কুখ্যাত “জজ মিয়া নাটক।” প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের রক্ষা করতে আলামত ধ্বংস এবং মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলে।

 

তদন্তে বেরিয়ে আসে, হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস–৮৪ গ্রেনেড পাকিস্তানে তৈরি, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করে না। একই ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার হয়েছিল ভারতের মুম্বাই হামলা, সিলেট হামলা ও শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে তাদের সহযোগী জঙ্গি নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করে এসব হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।

 

রায় ও ন্যায়বিচার

 

২০০৭ সালের পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয় এবং দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৮ সালে আদালত এ মামলার রায় দেন। আদালত ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপি নেতা তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১১ জন পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এ রায় ছিল বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।

 

কিন্তু ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে সম্প্রতি হাইকোর্টের এক বেঞ্চ ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্ক এবং প্রমাণ করে যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী জঙ্গি–সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছে।

 

ইতিহাসের ধারাবাহিকতা

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারার উগ্র–জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা। বিএনপি–জামায়াত জোটের রাজনৈতিক সহিংসতা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনা ও বিদেশি শক্তির মদদে এই হামলা পরিচালিত হয়েছিল।

 

জাতির শপথ

 

২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলা শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ওপর এক নির্মম আঘাত। দিনটি এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরোধ দিবস হিসেবে চিহ্নিত। নিহতদের স্মরণে প্রতি বছর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

 

বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত শক্তি যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে। ২১ আগস্টের রক্তের ঋণ জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়, হত্যার রাজনীতি ও জঙ্গিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলমান রাখতে হবে।

সব খবর