জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাব থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আপত্তির কারণে তা এখনই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকার আপাতত কমিশনের ১৮টি সুপারিশের মধ্যে ৮টি বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যেখানে পদবি পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নয়।
২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার একটি ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিশন ডিসি ও ইউএনও পদবি পরিবর্তনের পাশাপাশি সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) গঠনের প্রস্তাব দেয়।
সুপারিশ অনুযায়ী, ডিসি’র নতুন পদবি হবে “জেলা ম্যাজিস্ট্রেট” বা “জেলা কমিশনার” এবং ইউএনও’র হবে “উপজেলা কমিশনার”। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-এর পদবিও পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য প্রশাসনের স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
তবে অনেক কর্মকর্তা পদবি পরিবর্তনকে অপ্রয়োজনীয় ও বিব্রতকর বলে মনে করছেন। তাদের মতে, বিদ্যমান পদবিতে জনসেবা দিতে কোনও সমস্যা নেই। বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকজন ডিসি ও ইউএনও জানান, দীর্ঘদিনের পরিচিত পদবি পরিবর্তন করলে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হতে পারে এবং সেবাপ্রদান ব্যাহত হতে পারে।
অন্যদিকে, সংস্কারপন্থীরা মনে করেন, “জেলা প্রশাসক” শব্দে শাসকের গন্ধ রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অগ্রহণযোগ্য। তারা ২০১৯ সালের নুসরাত হত্যা মামলায় আদালতের মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, কিছু ডিসি ও ওসি নিজেদের জমিদার মনে করেন। এ ধরনের মনোভাব পরিবর্তনে পদবি সংস্কার জরুরি।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা একেএম শামসুদ্দিন তার লেখায় বলেন, “আমলাতন্ত্র-নির্ভর শাসনব্যবস্থায় জনগণকে প্রজা ভাবার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ডিসি-ইউএনও পদবি পরিবর্তন সেই মনোভাব ভাঙতে সহায়ক হতে পারে।”
সংস্কার কমিশনের প্রধান মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, “আমরা সুপারিশ করেছি, বাস্তবায়ন করবে সরকার।” ফলে পদবি পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিষয়টি এখন সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।