বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী, পাড়ার লোক, ফেসবুক ফ্রেন্ড, ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার; জীবনে কতজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে? আর কতজনকে আমরা সত্যিই “সামলাতে” পারি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের মস্তিষ্কের সামাজিক ক্ষমতা সীমিত। আর সেই সীমার নাম “ডানবার নম্বর”।
ব্রিটিশ মনোবিদ রবিন ডানবারের মতে, মানুষের মস্তিষ্ক একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫০ জনের সঙ্গে অর্থবহ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। এর বেশি হলে সম্পর্কের গভীরতা কমে যায়, মনোযোগ ছড়িয়ে পড়ে, আর আবেগের জায়গা ফাঁকা হয়ে যায়।
মস্তিষ্কের ভেতরেই সম্পর্কের সীমা
মানুষের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ১.৩৬ কেজি, যার এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে নিওকর্টেক্স। এই অংশই নিয়ন্ত্রণ করে স্মৃতি, ভাষা, সমস্যা সমাধান এবং সামাজিকতা। গবেষণা বলছে, নিওকর্টেক্স যত বড়, সম্পর্কের পরিধিও তত বড়। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৫০ জন, আর মানুষের ক্ষেত্রে ১৫০।
এই ১৫০ জনের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হন মাত্র ৫ জন, যাঁদের সঙ্গে আমরা মনের সব কথা ভাগ করি, সপ্তাহে অন্তত একবার যোগাযোগ রাখি। এরপর থাকে আরও ১০ জনের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বৃত্ত, যাঁদের সঙ্গে মাসে একবার দেখা হয়। এই ১৫ জনই আমাদের সামাজিক মনোযোগের ৬০% দখল করে থাকেন।
সম্পর্কের স্তরবিন্যাস: কারা থাকেন কোন বৃত্তে?
ডানবারের মতে, রাত ৩টায় হংকং বিমানবন্দরে হঠাৎ এই ১৫০ জনের কারও সঙ্গে দেখা হলে আমরা পিঠ চাপড়ে দিতে দ্বিধা করব না। কিন্তু এর বাইরে? হয়তো হাসি বিনিময়, তারপর চুপচাপ চলে যাওয়া।
ডিজিটাল যুগে সম্পর্কের বিস্তার বাস্তব না ভার্চুয়াল?
অনেকে বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, এসব প্ল্যাটফর্মে তো হাজার হাজার “বন্ধু” বা “ফলোয়ার” আছে। তাহলে কি ডানবারের ১৫০-র সীমা ভেঙে গেছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, না। ভার্চুয়াল পরিচিতি বাড়লেও আবেগ, মনোযোগ, সময়, এসবের সীমা তো একই আছে। আপনি হয়তো ৫০০ জনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠান, কিন্তু ক’জনের সঙ্গে সত্যিই কথা বলেন? সম্পর্ক মানে শুধু নাম জানা নয়, মানে সময় দেওয়া, অনুভব করা, পাশে থাকা।
সম্পর্ক বদলায়, বৃত্তও বদলায়
জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে এই ১৫০ জনের তালিকা বদলাতে পারে। স্কুলের বন্ধু, কলেজের সহপাঠী, অফিসের কলিগ, পাড়ার চাচা, সময় বদলালে সম্পর্কের গুরুত্বও বদলায়। কেউ চলে যান, কেউ আসেন। কিন্তু সংখ্যাটা মোটামুটি একই থাকে।
সম্পর্কের প্রভাব: শুধু আবেগ নয়, স্বাস্থ্যও
গবেষণা বলছে, সামাজিক সম্পর্ক শুধু মানসিক শান্তি নয়, শারীরিক সুস্থতারও চাবিকাঠি। যাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তাঁদের মধ্যে স্ট্রোক, অবসাদ, স্মৃতিভ্রংশ, হার্টের রোগের ঝুঁকি কম। সম্পর্ক মানে জীবনকে দীর্ঘ করা।
তাহলে কী শিখলাম?
তাই, হাজার ফলোয়ারের ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে, নিজের ১৫০ জনকে খুঁজে নিন। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটান, কথা বলুন, পাশে থাকুন। কারণ, শেষ পর্যন্ত সম্পর্কই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।