শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটে স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন কর্মী–সমর্থক এই হামলা চালায়। এতে অন্তত পাঁচজন সাংবাদিক আহত হন এবং এক ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত সাংবাদিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্মৃতিসৌধ এলাকায় শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ফুটেজ ধারণে বাধা সৃষ্টি করেন সোহাগ নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী। সাংবাদিকরা সৌজন্য বজায় রেখে তাকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানালেও তিনি তা উপেক্ষা করে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সোহাগ ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন উশৃঙ্খল কর্মী হঠাৎ ফটো জার্নালিস্ট ডালিমের ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
এই হামলায় আহত হন দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার ও মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (এমআরএ) সভাপতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার শার্ট ধরে টেনে হিঁচড়ে ডিভাইস ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণস্থলে এ ধরনের হামলা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।” হামলার প্রতিবাদ জানাতে গেলে সময়ের আলোর রিপোর্টার মাহবুব আলম শ্রাবণকেও সজোরে আঘাত করা হয় বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় আহত অন্য সাংবাদিকরা হলেন—জাগো নিউজের রিপোর্টার রাকিব হাসান, বাংলা নিউজ ২৪ ডটকমের রিপোর্টার সাইমুম মুবিন পল্লব, ঢাকা পোস্টের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার মাহমুদ আল মামুন মারুফ এবং জাগো নিউজের ভিডিও জার্নালিস্ট শাহরিয়ার রাকিব। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় নেতা হাফিজ দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে সাংবাদিক সমাজ এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (এমআরএ)। সংগঠনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি আক্তারুজ্জামান পৃথক বিবৃতিতে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মতো একটি পবিত্র স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ওপর সরাসরি আঘাত। তারা অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন তারা।