আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাংবাদিকদের শারীরিক, ডিজিটাল এবং মানসিক নিরাপত্তা ঝুঁকি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়বে বলে নতুন এক জরিপে উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটালি রাইট’-এর পরিচালিত এই জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের বেশির ভাগই জানিয়েছেন, নির্বাচনের মাঠে সংবাদ সংগ্রহের সময় তাদের আক্রমণ, হয়রানি, নজরদারি ও অপতথ্য প্রচারণার মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের ৮৯ শতাংশ আশঙ্কা করছেন যে তারা শারীরিক আক্রমণ বা মারধরের শিকার হতে পারেন। ৭৬ শতাংশ মনে করেন মৌখিক হয়রানি এবং ৭১ শতাংশ মনে করেন ভয়-ভীতি প্রদর্শন হবে প্রধান ঝুঁকি। নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেশি—৫০ শতাংশ যৌন হয়রানি এবং ৪০ শতাংশ যৌন আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
শনিবার ঢাকার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। এতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা অংশ নেন। ‘হাই রিস্ক, লো প্রিপেয়ার্ডনেস: জার্নালিস্ট সেফটি ইন ২০২৬ ইলেকশন’ শিরোনামের এই গবেষণায় ১৯ জেলার ২০১ জন সাংবাদিকের ওপর জরিপ এবং ১০টি গভীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
ডিজিটাল ঝুঁকি ও অপতথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ সাংবাদিক জানিয়েছেন, তাদের বা তাদের গণমাধ্যমকে কেন্দ্র করে অপতথ্য প্রচারের ঝুঁকি রয়েছে। ৬৫ শতাংশ হ্যাকিংকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন। নারী সাংবাদিকেরা অনলাইন নজরদারি ও হয়রানির ব্যাপারে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উত্তরদাতাদের অর্ধেকেরও বেশি আশঙ্কা করেন, তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর প্রচারণা চালানো হতে পারে।
সংবাদমাধ্যমের প্রস্তুতি দুর্বল
গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ গণমাধ্যমের মধ্যেই নিরাপত্তা পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো কাঠামো নেই। মাত্র ২৪ শতাংশ সাংবাদিক জানিয়েছেন যে তারা নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ বা সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছেন। ৭৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো ডিজিটাল নিরাপত্তা নীতিমালা নেই।
জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের মতে, শারীরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মীদের কাছ থেকে আসে। নারী ও আঞ্চলিক সাংবাদিকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকেও বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ঝুঁকি কমাতে সুপারিশ
গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক-ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, সুস্পষ্ট নিরাপত্তা প্রোটোকল, জেন্ডার-সংবেদনশীল সুরক্ষা ব্যবস্থা, দ্রুত জরুরি সহায়তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।