রাজধানীর নতুন বাড্ডায় গভীর রাতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বাসা থেকে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেলকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান এবং অনলাইন এডিটর অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি সোহেলকে পাঁচজন ডিবি জ্যাকেট পরা ব্যক্তি বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী সুমাইয়া সীমা।
সীমা জানান, কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলতেই পাঁচজন ডিবি পোশাকধারী ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় দেয়। তাদের একজন নিজেকে আশরাফুল হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং “কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।” কিন্তু রাত আড়াইটা পর্যন্তও তাকে ফিরিয়ে না দেওয়ায় তিনি চরম উদ্বেগে পড়েন।
সোহেলকে কোথায় নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ডিবির কর্মকর্তা বা পুলিশের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, ডিএমপি ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে সোহেল ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন।

একই রাতে সেন্টার ফর টেকনোলজি জার্নালিজমের (সিটিজে) সাধারণ সম্পাদক সাইফ আহমাদ সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো বার্তায় বলেন, “মধ্যরাতে সাংবাদিককে এইভাবে আটক গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। কেন এত রাতে নেওয়া হল এর স্বচ্ছ ব্যাখ্যা জরুরি।”
বুধবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুক পোস্টে সোহেল জানান, প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবির হেফাজতে থাকার পর তাকে বাসায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও তাকে আসামির খাতায় নাম লিখে গারদে সাধারণ আসামিদের সঙ্গে রাখা হয়। কেন তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তর ডিবির কর্মকর্তারাও দিতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি।
সোহেল অভিযোগ করেন, এনইআইআর (ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার) চালুর প্রতিবাদে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি মিডিয়া পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীর পক্ষে ‘মনোপলি সুবিধা তৈরির জন্য’ সরকারের এক উপদেষ্টার ইশারায় তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তার ভাষায়, “প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই ছিল উদ্দেশ্য।”
তিনি আরও জানান, তার সংগঠনের সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও তুলে নেওয়া হয়েছে এবং তিনি এখনও ডিবি কার্যালয়ে রয়েছেন।
পোস্টে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হলো? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?”
এদিকে সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “প্রথম শুনলাম।” তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে তুলে নেওয়া ঠিক নয় এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এ ঘটনায় ফেইসবুকের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়বের নাম এসেছে। তবে ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব তা অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ তার কাছ থেকে ‘সুযোগ সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়ে’ এ ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে।
আর গোয়েন্দা পুলিশ পুরো বিষয়টিকে তুলে ধরেছে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে।
ঘটনাটি গণমাধ্যম মহলে সমালোচনার ঝড় তুলেছে। অনেকেই এটিকে দেশে “বাকস্বাধীনতা ও সাংবাদিক নিরাপত্তার উদ্বেগজনক পরিস্থিতির” প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।