বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানির কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভয়াবহ সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছে কমনওয়েলথ জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (সিজেএ)। আন্তর্জাতিক এই সংগঠন সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিতে বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে বিশিষ্ট সাংবাদিক শ্যামল দত্তের মেয়ে শুশমা শশীর আবেগঘন আবেদন। ‘ভোরের কাগজ’ সম্পাদক ও সিজেএ’র সহ-সভাপতি শ্যামল দত্তকে গত সেপ্টেম্বর থেকে আটক রাখা হয়েছে। শশি বলেন, “বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এক বিরাট অন্যায় চলছে। আমার বাবাসহ শতাধিক সাংবাদিক মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে আছেন। কাউকেই ন্যায্য বিচার দেওয়া হচ্ছে না।”
তার অভিযোগ, আটক সাংবাদিকরা কারাগারে চিকিৎসা বঞ্চনা ও অমানবিক পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, “বাবা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগলেও সিপ্যাপ মেশিন দিতে দুই মাস সময় লেগেছে। এ সময় দুবার হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। ক্যান্সার রোগী সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুকেও কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও জানান, তার বাবার বিরুদ্ধে প্রথমে হত্যার মামলা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে ২০১৩ সালের একটি ঘটনার ভিত্তিতে নতুন করে ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে করে তার বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুইটিতে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্যামল দত্ত ছাড়াও একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু এবং সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদকেও গত বছর গ্রেপ্তার করা হয়। অনেক সাংবাদিকের জামিন আবেদনও নিয়মিতভাবে খারিজ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে লন্ডনে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সেখানে সিজেএ নির্বাহী সদস্য রিচার্ড বোর্ন বলেন, “বাংলাদেশ কমনওয়েলথে গণমাধ্যম স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর করলেও দেশে সাংবাদিকদের নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চলছেই।”
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এসব মামলাকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন (আইএফজে) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম সাংবাদিকদের ‘অপরাধী বানানোর প্রবণতা’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
ইউনেস্কোর পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ২০২৫ সালে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গত ৩০ বছরে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ৩৩ জন। আর বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬৫তম স্থানে নেমে গেছে।
প্রতিবেদনটির উপসংহারে সিজেএ বলেছে, “এই সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করা নতুন সরকারের জরুরি দায়িত্ব।”