দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সংঘটিত হামলাকে ‘মধ্যযুগীয় কায়দার’ বর্বরতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর। তিনি বলেছেন, এ ধরনের হামলা শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, পুরো সমাজ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ভয়ংকর বার্তা বহন করে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন নূরুল কবীর। দেশে চলমান ‘মব ভায়োলেন্স’-এর প্রতিবাদে সম্পাদক পরিষদ ও নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সূচনা বক্তব্যে নূরুল কবীর বলেন, “তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে। যখন অফিসে সবাই কাজ করছিল, তখন চারপাশ থেকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দমকল বাহিনী যাতে পৌঁছাতে না পারে, সে জন্য প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যাদের সঙ্গে মতান্তর আছে, তাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি নিছক হামলা নয়, এটি পরিকল্পিত বর্বরতা।”
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো সমাজ যদি এ ধরনের ঘটনা সহ্য করে এবং এর বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে না দাঁড়ায়, তাহলে শুধু কিছু সংগঠন নয়, পুরো সমাজব্যবস্থাই ধ্বংসের দিকে যাবে। এতে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সামাজিক অগ্রগতির সব সম্ভাবনা রুদ্ধ হয়ে পড়বে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, “আমি সারা জীবন সংগ্রাম করেছি একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য। আজ যে বাংলাদেশ দেখছি, সেই স্বপ্ন আমি কোনো দিন দেখিনি। আজ আঘাত এসেছে শুধু প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের ওপর নয়, আঘাত এসেছে গণতন্ত্রের ওপর।”
তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার ও কথা বলার অধিকার আবারও আক্রান্ত হয়েছে। জুলাই আন্দোলন ছিল এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, আর আজ সেই অর্জনের জায়গাতেই আঘাত এসেছে। কোনো দল বা রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সব গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভাটি সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। এতে আরও বক্তব্য দেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।