সর্বশেষ

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

হয়রানি ঠেকাতে সরকার কতটা আন্তরিক?

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৪৬
হয়রানি ঠেকাতে সরকার কতটা আন্তরিক?

দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অন্যান্য অভিযোগে মামলা অব্যাহত রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এসব মামলা অধিকাংশই হয়রানিমূলক এবং সংবাদকর্মীদের ভয়ভীতির মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ‘পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হলেও সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির মাত্রা তাতে খুব একটা কমেনি।

 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)–এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ৯০ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন, ৬৫টি মামলা হয়েছে সংবাদ প্রকাশের জেরে, এবং ৩৭ জন নির্যাতন ও হুমকির মুখে পড়েছেন। এছাড়া, একজন সাংবাদিককে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আসকের তথ্যমতে, এ সময় মোট ৩১৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।

 

২০২৪ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের সংখ্যা ছিল আরও বেশি—৫৩১ জন নির্যাতিত ও একজন নিহত। অন্যদিকে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় ১৪০ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে।
 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ২৬৬ জন সাংবাদিক বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েছেন।

 

এই প্রেক্ষাপটে সরকার গত বছরের অক্টোবরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা পর্যালোচনার জন্য একটি ‘পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠন করে। কমিটির সভাপতি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম এর নেতৃত্বে ওই কমিটি বিজ্ঞপ্তি ও চিঠির মাধ্যমে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে মামলার তথ্য আহ্বান করে।

 

কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তিন দফায় আহ্বানের পর সারাদেশ থেকে ৭২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এসব মামলার বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের, যেখানে স্থানীয় দ্বন্দ্ব বা রাজনৈতিক প্রতিশোধের কারণে সাংবাদিকদের জড়ানো হয়েছে।

 

তার দাবি, প্রায় ৭০ শতাংশ মামলা স্থানীয় বিরোধজনিত, এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অনেককে দলীয় পদও পালন করতে দেখা গেছে।

 

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, “সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে—এমন নয়। কিছু ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বা উসকানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগ রয়েছে। আমরা সুপারিশ করেছি, যাতে কেউ অহেতুক হয়রানির শিকার না হন।”

 

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, সাংবাদিকদের বিষয়টি যেহেতু তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, তাই পর্যবেক্ষণ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মামলাগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।

 

তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আপডেট তথ্য বর্তমানে তাদের কাছে নেই।

 

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—‘পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠনের পরও সাংবাদিক হয়রানি ঠেকাতে সরকার কতটা আন্তরিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পেরেছে?

সব খবর

আরও পড়ুন