সর্বশেষ

বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস

যৌথ দায়িত্ব সামলাচ্ছে নারী একা

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:২১
যৌথ দায়িত্ব সামলাচ্ছে নারী একা

বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের দায়ভার এখনও মূলত নারীর কাঁধেই। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০২২-২৩ অনুসারে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর ৯১ শতাংশ নারী, আর পুরুষের অংশগ্রহণ মাত্র ৯ শতাংশ। গত ৫০ বছরে এ হার সামান্য বেড়ে হলেও এখনো হতাশাজনকভাবে কম।

 

দেশে বর্তমানে ৬৪ শতাংশ দম্পতি আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তবে ১০ শতাংশ দম্পতি ইচ্ছা থাকলেও নানা কারণে কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন না। জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণের সংকট, কোথায় পাওয়া যায় তা না জানা এবং সামাজিক-ধর্মীয় বাধা এর বড় কারণ।

 

পুরুষের সীমিত অংশগ্রহণ

 

১৯৭৫ সালে দেশে মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ কনডম ব্যবহার করতেন। ২০২২-২৩ সালের জরিপে দেখা যায়, এখন ৭ শতাংশ পুরুষ কনডম ও ২ শতাংশ এনএসভি (ছুরিবিহীন ভ্যাসেকটমি) ব্যবহার করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের মধ্যে ভুল ধারণা ও কুসংস্কারের কারণে তারা এ দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। অথচ কনডম বা এনএসভির উল্লেখযোগ্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

 

নারীর অভিজ্ঞতা, বাড়তি কষ্ট

 

জন্মনিরোধক ব্যবহারে নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। কিশোরগঞ্জের কয়েকজন নারী জানান, স্বামী কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করেননি। তাদেরকেই পিল, ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্ট নিতে হচ্ছে। এর ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছেন তারা। কেউ কেউ নিয়মিত বড়ি না পেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হয়েছেন।

 

বিডিএইচএসের তথ্য বলছে, জন্মনিরোধক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে খাবার বড়ি (২৭ শতাংশ)। এরপর ইনজেকশন ১১ শতাংশ, কনডম ৮ শতাংশ, নারী বন্ধ্যাকরণ ৫ শতাংশ এবং পুরুষ বন্ধ্যাকরণ মাত্র ১ শতাংশ।

 

বিশেষজ্ঞদের মত

 

অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান জানান, নারীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্টে মাসিকের অনিয়ম, মাথাব্যথা, ওজন বৃদ্ধি হয়। খাবার বড়ির কারণে দুধ কমে যাওয়া বা মাসিকে পরিবর্তনের মতো জটিলতাও দেখা দেয়।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বিল্লাহ হোসেন বলেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে অনেকেই জন্মনিরোধক সামগ্রী পাচ্ছেন না। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বাড়ছে। এর সঙ্গে অনিরাপদ গর্ভপাতও হচ্ছে, যা মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

 

প্রয়োজন পুরুষের ভূমিকা

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সফল করতে হলে পুরুষের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি। এজন্য কাউন্সেলিং, সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পুরুষ যদি স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তা সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ হয়। নারীর জন্য এ পদ্ধতি জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ভ্রান্ত ধারণার কারণে পুরুষরা আগ্রহী নন।

 

বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য হলেও, টেকসই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরুষদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া জরুরি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সব খবর