রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও আইনের শাসনের দুর্বলতায় অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি–এইচআরএসএস এর মাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সংঘর্ষ, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার অন্তত ৬৪টি ঘটনায় ১০ জন নিহত এবং ৫১৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে ৩৭টি ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ২৮৬ জন আহত হন। বিএনপি–আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে ৬০ জন, আর বিএনপি–জামায়াত সংঘর্ষে ১৩৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত ১৭টি টার্গেট হামলায় ৯ জন রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ৩৪টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪৮ জন সাংবাদিক নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫ জন আহত, ১১ জন লাঞ্ছিত, ৯ জন হুমকি প্রাপ্ত, এবং ২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিশেষভাবে আলোচিত দুটি ঘটনা হলো বাগেরহাটে সাংবাদিক এ এস এম হায়াত উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা এবং ঢাকায় সাংবাদিক স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের রহস্যজনক মৃত্যু। দুটোই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অক্টোবরে ১৭টি গণপিটুনিতে ১০ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। নওগাঁ ও গাজীপুরে জনগণের হাতে আটক দুজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা এইচআরএসএস ‘চরম উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একই সময়ে দুইটি হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৩ জন আহত হয়েছেন—নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে দুর্গাপূজার মণ্ডপে এবং ময়মনসিংহে শ্যামাপূজা মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে।
সীমান্ত পরিস্থিতিও ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৪ বাংলাদেশিকে বিএসএফ গ্রেপ্তার করে এবং ত্রিপুরায় ৩ জন বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ১৩৫ জন বাংলাভাষী মানুষকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়। মিয়ানমার সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে এক বিজিবি সদস্য নিহত এবং আরাকান আর্মির হাতে ১৮ জন জেলে আটক হওয়ার ঘটনাও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র আরও ভয়াবহ। অক্টোবর মাসে ২২১ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার, ৭৮ জন ধর্ষণ, ৯ জন গণধর্ষণ, ৫ জন ধর্ষণের পর হত্যা হন। যৌতুকজনিত নির্যাতনে ৪ নারী মৃত্যুবরণ, আর পারিবারিক সহিংসতায় ৪৯ নারী প্রাণ হারিয়েছেন। ১৩৩ শিশু নির্যাতনের ঘটনা, যার ৩৪ জন নিহত হয়েছে।
এইচআরএসএস মনে করে, দেশে মানবাধিকার ও আইনের শাসন রক্ষায় রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং নাগরিকদের সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি। সংগঠনটি সরকারের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।